উচ্চকক্ষ গঠনে আনুপাতিক ভোট চায় ৬০ নাগরিক, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ঐকমত্যের আহ্বান

আনুপাতিক ভোটে উচ্চকক্ষ গঠনে ঐকমত্যের আহ্বান ৬০ নাগরিকের

আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদের ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ গঠনের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ৬০ বিশিষ্ট নাগরিক। তারা বলেছেন, এই প্রস্তাবটি জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

তাদের মতে, প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

সোমবার রাতে বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর সংবাদমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠান। তিনি নাগরিক কোয়ালিশন নামের নতুন একটি প্ল্যাটফর্মের সহসমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন। যদিও বিবৃতিটি ‘নাগরিক কোয়ালিশন’-এর নামে পাঠানো হয়নি।

বিবৃতিতে বলা হয়, “জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীর প্রাক্কালে আমাদের রাষ্ট্র ও প্রজাতন্ত্রের সংস্কারের কাজ জোরেশোরে এগিয়ে চলেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্কারে সম্মত হয়েছে। ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি মৌলিক ঐকমত্য রয়েছে।”

তারা বলেন, “জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার এই প্রক্রিয়াকে আমরা স্বাগত জানাই। প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ সংসদীয় পদ্ধতিকে আরও জবাবদিহিমূলক করবে এবং ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।”

তবে উচ্চকক্ষ সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি ও কার্যপরিধি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, “যদি এটি বর্তমান নিম্নকক্ষের মতো একই আসন বণ্টনের নিয়মে হয়, তাহলে কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন আসবে না। বরং প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ যদি আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে গঠিত হয়, তাহলে তা কার্যকরভাবে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারবে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “এ পদ্ধতির মাধ্যমে এমন দলগুলোরও উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্ব থাকবে, যারা সারাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট পেয়েও নিম্নকক্ষে কোনো আসন পায়নি। ফলে সরকারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ঠেকানো সহজ হবে।”

তারা মনে করেন, উচ্চকক্ষের কার্যক্ষমতা এমনভাবে সীমিত হওয়া উচিত যাতে প্রাত্যহিক নির্বাহী কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত না হয়। শুধু সংবিধান সংশোধন ও যুদ্ধ ঘোষণার মতো বিষয়ে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা থাকা উচিত। তবে সরকারের বিল ও সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার কিছু ক্ষমতা উচ্চকক্ষ পেতে পারে।

বিবৃতিতে বলা হয়, “আমাদের গণতন্ত্র বারবার হুমকির মুখে পড়েছে ‘উইনার টেইকস অল’ সংস্কৃতির কারণে। ক্ষমতাসীনরা বিরোধীদের মতামতকে অবজ্ঞা করে এবং বিরোধীরা প্রায়ই প্রতিবাদে এমনভাবে বাধা সৃষ্টি করে যা জাতীয় স্বার্থকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।”

বিবৃতির শেষে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, “আনুপাতিক ভোটে উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাবটি গ্রহণ করে তা জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আপনারা ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিন।”

বিবৃতিতে সই করা ৬০ জন নাগরিক হলেন
আইরিন খান, শহিদুল আলম, আসিফ মোহাম্মদ শাহান, মানজুর আল মতিন, ফাহিম মাশরুর, জ্যোতি রহমান, জিয়া হাসান, ফারাহ কবির, ড. রুশাদ ফরীদি, উমামা ফাতেমা, আশরাফ কায়সার, ব্যারিস্টার মিতি ফারজানা, ড. অতনু রব্বানী, মাহরুখ মহিউদ্দীন, ড. ইমরান মতিন, ড. মির্জা হাসান, ড. অনন্য রায়হান, জাফর সোবহান, সফিকুর রহমান, রেজাউল করিম রনি, ড. রুমি আহমেদ, আমিনুল ইসলাম ইমন, শাহেদ ইকবাল, এহতেশামুল হক, ব্যারিস্টার মুশতাক আহমেদ, সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন, সুবাইল বিন আলম, ইসলামুল হক, সেলিনা আজিজ, সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া, আসিফ বিন আলী, রন্টি চৌধুরী, সাইফ শাহ মোহাম্মদ, মাসুদ রানা, নাজিফা জান্নাত, সাদিক মাহবুব ইসলাম, আহমদ ইসলাম মুকসিত, আবদুল্লাহ আল মামুন, কায়সার চৌধুরী, মিল্লাত হোসেন, মোহাম্মদ মিয়া রাদ, ক্যাপ্টেন এ কে এম মোতাহারুল ইসলাম, রকিবুল হাসান, রুবায়েত সারওয়ার, নাঈম মোহায়মেন, প্রকাশ চৌধুরী, গালিব ইবনে আনোয়ারুল আজীম, দিদার ভূঁইয়া, মোস্তফা কামাল পলাশ, মাহবুব সাদিক, খালেদ শফিউল্লাহ, তারিকুল ইসলাম অনিক, রনি মন্ডল, হাসান মাহমুদ, সৈয়দ আমীন, মাহমুদুল খান আপেল, সাইফুল ইসলাম সরকার, তারেক হোসেন, হুমায়ুন কবির।