জুলাই সনদ নিয়ে আশা-নিরাশার মধ্যে থেকেও জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি চূড়ান্ত সনদের জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে বলে মনে করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের সপ্তম দিনের সংলাপে সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, “কখনো কখনো আমরা অগ্রসর হই। কখনো আবার যতটা চাই, ততটা পারি না—তাতে কিছুটা হতাশাও আসে। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে গেলে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে একটা সনদের জায়গায় যেতে পারব। এটি সকলের প্রচেষ্টা ও আন্তরিক সহযোগিতার ফলেই সম্ভব হবে।”
জুলাই সনদ হবে রাজনৈতিক দলগুলোর একটি প্রতিশ্রুতিপত্র, যেখানে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, পরবর্তী জনআকাঙ্ক্ষার বিবরণ এবং রাষ্ট্র সংস্কারে সম্মত বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে।
অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের গড়া নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ইতোমধ্যে অভিযোগ করেছে, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই সনদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “যদি কোনো পক্ষ দলীয় স্বার্থে ঐকমত্য প্রক্রিয়া ব্যাহত করে, তবে সরকারের উচিত হবে সাধারণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করা।”
আলী রীয়াজ বলেন, “এক বছর আগে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর ঊর্ধ্বে উঠে রাজপথে নেমেছিলাম, প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে যা অর্জন করেছি, আজকে সেই পথ অতিক্রম করে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি।”
তিনি বলেন, রাষ্ট্র কাঠামো বদলের মধ্য দিয়ে একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা চলছে, যেখানে নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং জীবনের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে, কেউ গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা কিংবা বিচারিক হত্যার শিকার হবে না।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থান শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর নয়, বরং নাগরিকদের এবং দলগুলোর ঊর্ধ্বে উঠে সকলের অবদানের ফল। এই সাফল্য থেমে গেলে চলবে না, একে সুরক্ষিত রাখতে হবে। সংস্কার কার্যক্রমে এগিয়ে যেতে রাজনৈতিক দলগুলো সহযোগিতা করছে।”
বুধবারের আলোচনায় সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদানের বিধান সংশোধনের প্রস্তাব উঠে আসার কথা রয়েছে।
বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে আলী রীয়াজ বলেন, “দলগতভাবে, জোটগতভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে গত কিছুদিন ধরে আমরা বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কমিশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয়েছে। এতে আমরা আশাবাদী হচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এক জায়গায় পৌঁছাতে পারব—এই বিশ্বাস আছে। কারণ এই দায়িত্ব এবং দায়বদ্ধতা আমরা সবাই প্রাণ দিয়ে অনুভব করি। মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই যেন সেই জায়গায় অগ্রসর হতে পারি, জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে আমরা একটি জায়গায় পৌঁছাতে পারব।”
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়ে ফেব্রুয়ারিতে। এই সুপারিশগুলোর ওপর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ বিষয়ে ৩৮টি দল ও জোটের মতামত চাওয়া হয়, যার মধ্যে ৩৩টি দল মতামত দেয়।
এরপর ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৫টি অধিবেশনের মাধ্যমে প্রথম দফার সংলাপ সম্পন্ন হয়। কোরবানির ঈদের পর শুরু হওয়া দ্বিতীয় দফার সংলাপের সপ্তম দিনের বৈঠক চলছে এখন।