এরশাদকে স্মরণে জাতীয় পার্টির নেতাদের ঐক্যের আহ্বান

দলের প্রতিষ্ঠাতার স্মরণসভায় এক মঞ্চে বসে ঐক্যের ডাক দিলেন বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে যাওয়া নেতারা। নিজেদের ভেতরকার বিভক্তির জন্য কেউ কেউ দায়ী করলেন ক্ষমতায় থাকা দলগুলোকেও।

সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার গুলশানে এ স্মরণসভা হয়। অনুষ্ঠানে সপ্তাহ খানেক আগে অব্যাহতি পাওয়া কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন।

গত সোমবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের দুই কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন মহাসচিব হিসেবে শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে নিয়োগ দেন। ঠিক এক সপ্তাহ পর এ ঐক্যের ডাক এল।

স্মরণসভায় জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, “সরকার আসে, সরকার যায়। একটা স্থিতিশীল ব্যবস্থা বাংলাদেশে আজও গড়ে ওঠেনি। সবাই চায় দেশের মানুষ ভালো থাকুক, কিন্তু সব সরকারই ভালো ও সংস্কারমূলক কাজ করতে পারে না। এরশাদ সাহেব সংস্কারমূলক কাজ করেছিলেন। এ স্মরণসভায় আমি এসেছি তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে।”

জাতীয় পার্টি (জি এম কাদের) সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “আমরা একজোটেই ছিলাম, এখনো আছি। রাজনৈতিক কারণে এবং দীর্ঘদিন সরকারে না থাকার কারণে আমাদের মধ্যে অনৈক্য তৈরি করা হয়েছে। আমরা একসঙ্গে নির্বাচনও করতে পারিনি। হৃদয়ে অনেক ব্যথা।”

তিনি আরও বলেন, “আজ পল্লীবন্ধু আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার কাজ রয়ে গেছে। তার দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পিত। গ্রামে মানুষ এখনো বলে, আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন, আমরা জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখতে চাই। সবাইকে বলব, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নিয়ে যাই।”

জাতীয় পার্টি (রওশন) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, “আজ জাতীয় পার্টির জন্য ঐতিহাসিক দিন। যখন জাতীয় পার্টি খণ্ড হতে হতে খাদের কিনারে পৌঁছেছিল, সেই মুহূর্তে পল্লীবন্ধুর সঙ্গে থাকা নেতারা এক মঞ্চে হাজির হয়েছেন।”

জি এম কাদেরকে ‘সুযোগসন্ধানী’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ভাইয়ের মৃত্যুর পর আপনি আবারও সেই সুযোগ নিয়েছেন। বড় বড় নেতাদের বের করে দিচ্ছেন। এটা কোনো তেল কোম্পানি না, এটা রাজনৈতিক দল। শুধু বউ নিয়ে রাজনীতি করা যায় না, ঘর করা যায়।”

তিনি আরও বলেন, “আজ সবাইকে নিয়ে আমরা নতুন করে জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নেব—এটাই হোক আজকের প্রত্যাশা।”

জাতীয় পার্টি (জি এম কাদের) সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “এরশাদের মতো নেতা আগামী ৫০ বছরে আসবে কিনা সন্দেহ আছে। আজ দেশের রাজনীতি এমন জায়গায় যে, একটি বড় দলের আট মাসের কর্মকাণ্ডে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।”

১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টিতে বেশ কয়েকবার ভাঙন হয়েছে। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর প্রথমবার, ১৯৯৭ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও শেখ শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার, ১৯৯৮ সালে কাজী জাফর ও শাহ মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে তৃতীয়বার, ২০০১ সালে নাজিউর রহমানের নেতৃত্বে এবং ২০১৩ সালে বিশেষ কাউন্সিলে আবার ভাঙন দেখা দেয়।

এ বিভক্ত নেতাদের ‘এক’ করে দ্রুত কাউন্সিল আহ্বানের আহ্বান জানান মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ আজ মাঠে নেই। দেশের মানুষ একটি মধ্যপন্থার গণতান্ত্রিক দল খুঁজছে। সেই সুযোগ আছে একমাত্র জাতীয় পার্টির। শিগগিরই কাউন্সিলের ব্যবস্থা করুন।”

জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন জেপির (মঞ্জু) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য (রওশন) আবু হোসেন বাবলা, জাতীয় পার্টির (ডা. মতিন) মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়, প্রেসিডিয়াম সদস্য (কাজী জাফর) দিদারুল আলম চৌধুরী এবং জাতীয় মহিলা পার্টির সভাপতি নাজমা আক্তার।