জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, এ দেশে কেবল বাংলাদেশপন্থিদেরই স্থান হবে।
শনিবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর ‘জাতীয় সমাবেশে’ দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, “এই বাংলাদেশে আবারও নতুন করে মুজিববাদী ও ভারতপন্থি শক্তিগুলো সক্রিয় হচ্ছে। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে বাংলাদেশপন্থি ছাড়া অন্য কোনো দেশপন্থি বা কোনো বাদপন্থি শক্তির জায়গা হবে না। এই দেশে ভারতীয় বা অন্য কোনো দেশের আধিপত্য চলতে দেওয়া যাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে। আমার হাজার হাজার সহযোদ্ধা আজ এখানে উপস্থিত। গত অগাস্টের ৫ তারিখের পরে আমাদের যে স্বপ্ন ছিল, আরেক অগাস্ট আসছে, কিন্তু সেই স্বপ্নগুলো পূরণ হয়নি।”
সারজিস বলেন, “অভ্যুত্থানের এক জুলাই পার হয়ে আরেক জুলাইয়ে এসে পৌঁছেছি, কিন্তু মুজিববাদীদের ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। গোপালগঞ্জে এখনো মুজিববাদীদের আস্তানা রয়েছে। মুজিববাদীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয়। মুজিববাদ একটি আদর্শ, যা শুধু আইনি পথে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। আমাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে মুজিববাদের কোমর ভেঙে দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু মুজিববাদ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই ঐক্যবদ্ধভাবে চালিয়ে যেতে হবে।”
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে সারজিস বলেন, “আমরা ১৯৪৭ সালের উপনিবেশবিরোধী আকাঙ্ক্ষা, ৭১ এর স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও ২৪ এর মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে চাই। ফ্যাসিস্টবিরোধী ২৪ এর শক্তিতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ঐক্যবদ্ধ মানে অন্ধভাবে কারও দালালি করা নয়। কেউ চাঁদাবাজি করলে বলব, সিন্ডিকেট চালালে বলব, দখলদারিত্ব করলে তাও বলব। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব।”
রাজনীতির সৌন্দর্য রক্ষার আহ্বান জানিয়ে সারজিস বলেন, “রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, প্রতিযোগিতা থাকবে। কিন্তু তা যেন ব্যক্তি আক্রমণে না যায়। ফ্যাসিস্টবিরোধী শক্তি এক হয়ে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হবে।”
তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সুশীল সরকারের ভূমিকা চাই না। তাদের অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের ভূমিকা দেখতে চাই। খুনি হাসিনার বিচার ও তার কার্যকর রায় দেখতে চাই।”
জুলাই আন্দোলনের নেতা সারজিস আরও বলেন, “বিচার বিভাগকে কোনো দলের বিচার বিভাগ হিসেবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তোষামোদকারী বাহিনী হিসেবে দেখতে চাই না। বাহাত্তুরের মুজিববাদী সংবিধান রেখে কোনোদিন বাংলাদেশপন্থি বাংলাদেশ সম্ভব নয়। নতুন সংবিধান, গণপরিষদ নির্বাচন, নারীদের ও সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”
সব গণহত্যার বিচার ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ সাত দফা দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ পর্যন্ত তারা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম বা পুরানা পল্টনের মোড়ে সভা করলেও এবারই প্রথম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করল।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল।