একাত্তর ও গণতন্ত্রে কোনো ছাড় নয়: মির্জা ফখরুল

একাত্তর ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জুলাই–আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “১৯৭১ আমাদের মূল কথা। স্বাধীনতার যুদ্ধ আমাদের মূল কথা, সেখানে কোনো ছাড় নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ও কোনো ছাড় নেই। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং গণতন্ত্রই চাই।”

তিনি আরও বলেন, “যতই দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি তত জটিল হচ্ছে। যারা গণতন্ত্রে, জনগণের অগ্রযাত্রায় এবং শোষণহীন সমাজে বিশ্বাস করে না, তারা আবার জোট বাঁধছে। যে ফ্যাসিস্ট শক্তিকে বিতাড়িত করা হয়েছিল তারা আবার সংগঠিত হয়ে ক্ষমতা ফিরে পেতে চক্রান্ত করছে।”

দেশে মবোক্রেসি, হত্যা ও ছিনতাই ভয়াবহভাবে বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের সামনে যে সুযোগ এসেছে, সেটি হারালে বাংলাদেশ আরও বহু বছর পিছিয়ে যাবে। প্রতিবার অভ্যুত্থান হবে, মানুষ প্রাণ দেবে, আর আমরা দায়িত্বহীনতার কারণে সেই সুযোগ হারাব—এটা হতে দেওয়া যাবে না।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “যত দেরি হচ্ছে, পরিস্থিতি তত ঘোলাটে হচ্ছে। যারা জনগণ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ছিল, তারা আবার সংঘটিত হয়ে গণতন্ত্র নস্যাৎ করতে কাজ শুরু করেছে। সংস্কার, সনদ ও নির্বাচন—এই তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে যত দ্রুত এগোনো যায়, দেশের জন্য তত ভালো। এর দায়ভার অন্তর্বর্তী সরকারের।”

আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, “ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা গণতন্ত্রের জন্য জরুরি। তা না হলে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর ও বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা পুরো প্রক্রিয়া ধ্বংস করে দিতে পারে। আমরা বিচার চাই, সংস্কার চাই এবং সংস্কার সম্পন্নের জন্য নির্বাচন চাই। নির্বাচন ছাড়া সংস্কার হবে না।”

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, “গণ–অভ্যুত্থানের পর আমরা যে ধরনের পরিবর্তন আশা করেছিলাম, তা হয়নি।”

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “গণ–অভ্যুত্থানের আন্দোলনে অংশ নেওয়া ৯০ ভাগ মানুষের নাম কেউ জানে না। রাজনৈতিক স্বার্থে অনেকে এ আন্দোলনের অবদানকে ছোট করে দেখাচ্ছে। শেখ হাসিনার পতন না হলে আমাদের অবস্থান কোথায় থাকত, তা ভাবা উচিত। পতন না হলে আবু সাঈদকে জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করা হতো।”

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, “প্রশাসনের চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মুহাম্মদ ইউনূস ও উপদেষ্টাদের কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি। ১১ মাসের কাজের ওপর যদি মার্ক দিতে বলা হয়, আমি ১০–এর মধ্যে ৪ দেব।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ছিল বিভেদের রাজনীতি না করা। কিন্তু সেটি এখনো চলছে। উচিত ছিল হিংসা ও বিভেদের রাজনীতি বাদ দিয়ে জনগণের জন্য নীতিনির্ভর নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করা। প্রত্যাশা ছিল এমন বিচারকাঠামো, যেখানে গুম–খুন হওয়া মানুষের বিচার হবে। সেটি এখনো দেখা যাচ্ছে না।” তিনি নির্বাচনের মাঠে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সভায় সভাপতিত্ব করেন গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু। বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ১২–দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উল্লাহ কায়সার, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের আহ্বায়ক নাঈম জাহাঙ্গীর, নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত প্রমুখ।