মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ২৯, চিকিৎসাধীন ৬৯ জনের মধ্যে ১০ জন আশঙ্কাজনক

ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর জঙ্গি বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ জনে। আহত ৬৯ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, চিকিৎসাধীন ৬৯ জনের মধ্যে ১০ জনকে ‘শঙ্কামুক্ত’ মনে করা হচ্ছে। ৩০ জনের অবস্থা এখনো ‘অস্পষ্ট’, যাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’ বলে জানান তিনি। বাকিদের অবস্থা ‘মাঝারি’ ধরনের।

মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)–এর তথ্যে পার্থক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘সংখ্যাটায় খুব বেশি পীড়াপীড়ির কিছু নেই। বিভ্রান্তি দূর হতে আমাদের একটু সময় দিন, কিছুক্ষণের মধ্যে দূর হয়ে যাবে।’’

তিনি জানান, নিহত ২৯ জনের মধ্যে ১৫ জন সিএমএইচে এবং ১০ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে ছিলেন। বাকি ৪ জনের বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁর কাছ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

বার্ন ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের সামনে মৃত্যু সংখ্যা নিয়ে ‘অস্পষ্টতা’র বিষয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। পরে এ বিষয়ে সায়েদুর রহমান বলেন, ‘‘এখানে আসার আগে আমরা আইএসপিআরের সঙ্গে কথা বলেছি। আইএসপিআরের তথ্যে যে একটি হাসপাতাল অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেটি লুবনা। লুবনা হাসপাতালের তথ্যের বিষয়ে এখানে আসার আগ মুহূর্তে আমরা যোগাযোগ করেছি। তাদের রেজিস্ট্রিতে কোনো মৃত নেই। কিন্তু ওনারা মুখে বলছেন, সেখানে দুজন শিশু ব্রড ডেড অবস্থায় এসেছিল, যাদের অভিভাবকরা নিয়ে যান।’’

তিনি বলেন, ‘‘ওই দুইজন পরবর্তীতে আমাদের কোনো হাসপাতালে আসেননি বিধায় তাদের রেকর্ড পাওয়া যাচ্ছে না। লুবনা হাসপাতালে মারা যাওয়া অভিভাবকদের নাম অন্তত তালিকাভুক্ত করার জন্য আমরা সহযোগিতা চেয়েছি।’’

সিএমএইচ ও উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের তথ্য নিয়েও কিছু পার্থক্য রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘উত্তরা আধুনিক থেকে একজনকে সিএমএইচে নেওয়া হয়েছিল। সেটি নিয়েও আইএসপিআরের সঙ্গে আমাদের তথ্যের পার্থক্য হয়েছে। আমরা আসার আগে নিশ্চিত হয়েছি, সিএমএইচে ১৫ জনের মৃতদেহ আছে। যদিও আইএসপিআরের তথ্যে সেখানে বলা হয়েছে ১৬ জন।’’

তথ্যভিন্নতার বিষয়ে সায়েদুর রহমান বলেন, ‘‘মৃতদেহ এবং দেহাবশেষ নিয়ে আমাদের কিছু পার্থক্য আছে, সেগুলো দূর হতে হয়তো একটু সময় লাগবে।’’

অন্যান্য হাসপাতালের ভর্তি রোগীদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই হাসপাতালে ভর্তি দুইজনকে কেবিনে শিফট করতে পেরেছি, যেটাকে আমরা উন্নতি মনে করি। ভর্তি রোগীদের মধ্যে ১০ জনকে শঙ্কামুক্ত মনে করছি, ৩০ জনের অবস্থা অস্পষ্ট, যার মধ্যে ১০ জনকে আমরা এখনও শঙ্কার মধ্যে মনে করি। বাকিদের অবস্থা মাঝারি।’’

তিনি জানান, অন্যান্য হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের যুক্ত করে ‘মাল্টিডিসিপ্লিনারি’ আটটি টিম গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও দুইজন নার্স রাতে পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আহতদের চিকিৎসায় ৭০–৮০ রকমের সরঞ্জাম প্রয়োজন হচ্ছে।

আহতদের সংখ্যা নিয়ে ১৬৫ জনের যে কথা বলা হচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৬০ জন, লুবনায় ১৩ জনের তালিকায় ছিল। যাদের বেশিরভাগকেই পরে অন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। রেকর্ড কিপিং ও মুভমেন্টের কারণে কিছু ‘ডুপ্লিকেশন’ হয়েছে।

তিনি জানান, ঢাকা মেডিকেলের তিনজনকে বার্ন ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছে, সিএমএইচ থেকে তিনজন পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে এখনো অশনাক্ত ছয়জন আছেন। সায়েদুর বলেন, ‘‘তাদের শনাক্তের জন্য ডিএনএ নমুনা রাখা হচ্ছে। যারা দাবি করবেন, ডিএনএ মিলিয়ে শনাক্ত করা হবে। অশনাক্তদের মধ্যে চারজনের জন্য স্বজনরা এখন পর্যন্ত নিখোঁজের দাবি করেছেন, দুইজনের বিষয়ে কেউ কোনো দাবি করেননি।’’

ডিএনএ পরীক্ষায় যে সময় লাগে, সেটি নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

সকালে সাংবাদিকদের সামনে এসে এই ঘটনাটিকে ‘অবর্ণনীয়’ মন্তব্য করে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘‘গতকাল এসে দেখি বার্ন ইনস্টিটিউটে লোকারণ্য। ভিড়টা কম হলে রোগীদের আনতে সুবিধা হতো।’’

পরে তিনি ২৯ জন মৃত্যুর তথ্য দেন এবং বাকি তথ্যের জন্য বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান কথা বলেন।

সোমবার দুপুরে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়। এতে দেড় শতাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটে, যাদের বেশিরভাগই শিশু। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে।