মাইলস্টোন স্কুলে ভয়াবহ জঙ্গি বিমান দুর্ঘটনার পর যখন এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে, তখন বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান স্পষ্ট করে বলেছেন — প্রযুক্তি কিছুটা পুরনো হলেও বিমানগুলোর সক্ষমতা ও রক্ষণাবেক্ষণ যথাযথভাবে করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার কুর্মিটোলায় বীর উত্তম এ কে খন্দকার বিমান বাহিনী ঘাঁটিতে দুর্ঘটনায় নিহত পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের ‘ফিউনারেল প্যারেড’ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
দুর্ঘটনায় পড়া এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটি পুরনো হয়ে গিয়েছিল কিনা — এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “বিমান সহজে পুরনো হয় না। প্রত্যেকটার একটা লাইফটাইম থাকে। প্রায় ৩০ বছর পর্যন্ত এদের আয়ু থাকে। মূল বিষয় হচ্ছে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা। আমরা কোনো কমপ্রোমাইজ করি না। প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি, যন্ত্রাংশ সব আমরা সরবরাহকারীর সঙ্গে চুক্তি করে নিশ্চিত করি।”
তবে প্রযুক্তিগতভাবে বিমানগুলো যে নতুন প্রযুক্তির চেয়ে পিছিয়ে আছে, তা স্বীকার করে তিনি বলেন, “প্রযুক্তিগতভাবে বিমানগুলো পুরনো, তবে আমরা নতুন প্রযুক্তির বিমান আনার চেষ্টা করছি। উন্নত বিশ্বের অত্যাধুনিক জঙ্গি বিমানও দুর্ঘটনায় পড়ে। এই বিমানগুলোও সর্বোত্তমভাবে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।”
দুর্ঘটনার কারণ জানতে ধৈর্য্য ধরতে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার এখনই ধারণা দেওয়া উচিত হবে না। যেহেতু পাইলট বেঁচে নেই আর বিমানও পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত, তাই সময় লাগবে। একক ইঞ্জিনে অনেক প্রযুক্তিগত সমস্যা বা পাখির আঘাতও হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, পাইলট সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন জনবহুল এলাকা এড়িয়ে স্কুলের খালি মাঠে বিমানটি নামাতে। সেই চেষ্টা করতে গিয়ে তিনি ইজেকশন করতে সময় পাননি। “তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, এ জন্য আমরা তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।”
জনবহুল এলাকায় জঙ্গি বিমান উড্ডয়ন, ‘লাশ লুকানোর গুজব’ এবং রক্ষণাবেক্ষণ ঘাটতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে প্রশ্ন ও সন্দেহ ছড়িয়েছে, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গুজব বিশ্বাস করবেন না। আমরা যা জানি, সঙ্গে সঙ্গে জানাচ্ছি। এখানে কিছু লুকানোর নেই। রক্ষণাবেক্ষণে কোনো ছাড় দেওয়া হয় না। ইঞ্জিনের এক ঘণ্টাও বেশি ব্যবহার করি না।”
দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত হয়েছেন, চিকিৎসাধীন আছেন ৬৮ জন, যাদের বেশির ভাগই শিশু। আহতদের সুচিকিৎসা এবং নিহতদের পরিবারকে সহায়তা দিতে বিমান বাহিনী বদ্ধপরিকর বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “একটা শক্তিশালী বিমান বাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গুজব ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে এই স্তম্ভকে দুর্বল করা ঠিক হবে না। আমরা শিক্ষা নেব এবং ভবিষ্যতে প্রতিকার করব ইনশাআল্লাহ।”
তুরস্ক সফরকালে দুর্ঘটনার খবর শুনে দ্রুত দেশে ফিরে আসা এয়ার চিফ বলেন, “এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আমারও হৃদয় ভেঙে গেছে। আমরা আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে যা যা দরকার, করব। আমরা সবাই মিলে তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করার চেষ্টা করব।”