স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতীক ব্যবহারের বিধান বাতিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক উত্থাপিত এ সংক্রান্ত চারটি আইনের সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়, যার ফলে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের মতো নির্বাচনগুলো আর দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হবে না।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেছেন।
২০১৫ সালের নভেম্বরে এক আইন সংশোধনের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে দলীয় পরিচয় ও প্রতীক ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের উদ্যোগে সংসদে পাস হওয়া ওই সংশোধনীর ফলে প্রায় নয় বছর ধরে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল, যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা বিতর্ক ও আলোচনা ছিল।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞরা স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহারের বিপক্ষে জোরালো মত দিয়ে আসছিলেন। তাঁরা মনে করেন, দলীয় প্রতীক ব্যবহারের ফলে তৃণমূল পর্যায়ে বিভাজন ও সংঘাত বৃদ্ধি পায় এবং যোগ্য অরাজনৈতিক প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ হারান। এই জনমতের প্রতিফলন ঘটে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের কার্যক্রমেও।
গত ডিসেম্বরে কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছিলেন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশনের কাছে আসা মতামতের একটি বড় অংশই ছিল দলীয় প্রতীক বাতিলের পক্ষে। বিশেষজ্ঞদের এই সুপারিশ ও বিভিন্ন মহলের দাবিকে বিবেচনায় নিয়েই সরকার অবশেষে এই ব্যবস্থা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিল।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পর স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে থাকছে না দলীয় প্রতীক। আজ উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক উত্থাপিত এ সংক্রান্ত ৪টি আইনের সংশোধনী অনুমোদন করা হয়েছে।’ এই ঘোষণার মাধ্যমে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে একটি অধ্যায়ের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটল।