ঘনীভূত লঘুচাপে উত্তাল সাগর, টেকনাফে মেরিন ড্রাইভের আড়াই কিলোমিটার সড়কে ভাঙন

বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে প্রথমে সুস্পষ্ট লঘুচাপ এবং পরে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে এবং জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফলে জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে আবারও কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভের আড়াই কিলোমিটার সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ঢেউয়ের আঘাতে সাবরাং ইউনিয়নের বাহারছড়া ঘাট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত অন্তত ১০টি স্থানে ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার বিশ্বাস।

এর আগেও একই এলাকায় দুই দফা ভাঙনের কারণে জিও ব্যাগ বসানো হয়েছিল। এবার সেই জিও ব্যাগ ডিঙ্গিয়ে জোয়ারের ঢেউয়ের ধাক্কায় অন্তত ১০টি স্থানে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে এবং এটি শুক্রবার সকাল ৬টায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৬৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় এক থেকে তিন ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস এবং দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সাবরাং ফতেআইল্যে পাড়া এলাকায় মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিম পাশে বসানো জিও ব্যাগের বাঁধ ধসে পড়েছে। এছাড়া কিছু এলাকায় সড়ক ভেঙে চাষের জমিতে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে। সড়ক সম্পূর্ণভাবে ভেঙে গেলে আশপাশের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে স্থানীয়দের আশঙ্কা।

২০২৩ সালের অগাস্ট এবং চলতি বছরের মে মাসেও একই এলাকায় জোয়ারের কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। তখন সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি) জিও টিউব দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করেছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন জানান, সড়কে ভাঙনের কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সড়কের পূর্ব পাশে কয়েক হাজার একর জমিতে চাষাবাদ হয়। সেখানে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়লে ফসলের বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

ভাঙনের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে বলে জানান সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ ছিদ্দিক।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মেরিন ড্রাইভে ভাঙনের অন্যতম কারণ সমুদ্র থেকে বালু তুলে জমি ভরাট করা। ট্যুরিজম পার্ক গড়ে ওঠার কারণে জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু তুলে জমি ভরাট করছেন, এতে সড়কের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে।

সাবরাং ইউনিয়নের বাসিন্দা আলী আহম্মদ বলেন, “মেরিন ড্রাইভের পূর্ব পাশে হোটেল-মোটেল গড়ার তোড়জোড় চলছে। অনেক প্রভাবশালী সৈকতের বালু তুলছেন অবৈধভাবে। তাই এখন একটু বড় ঢেউ এলেই সড়ক ভাঙছে।”

সওজের উপ-প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার বিশ্বাস বলেন, “মেরিন ড্রাইভ সড়কটি সেনাবাহিনীর ইসিবির তত্ত্বাবধানে রয়েছে। টেকনাফ অংশে ভাঙনের খবর পেয়েছি। ইসিবি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।”

ভাঙনের খবর পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, “ভাঙন রোধে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে জানানো হয়েছে।”