চীনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার দিকটিতে মনোনিবেশ করলেও, মানবাধিকার ও নিরাপত্তা ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিচ্ছেন মার্কিন সিনেটররা। দেশটির ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের সিনেটররা চীনের বিরুদ্ধে তিনটি বিল আনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চীনে সংখ্যালঘুদের ওপর দমন-পীড়ন, ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন এবং তাইওয়ানের প্রতি আচরণ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এই বিলগুলো আনা হচ্ছে। বিলগুলো উত্থাপনের আগেই বার্তা সংস্থা রয়টার্স তা দেখতে পেয়েছে।
দুই দলের সমর্থন থাকায় এই পদক্ষেপটিকে ওয়াশিংটনের তীব্র দলীয় বিভক্তির মধ্যে একটি বিরল দ্বিদলীয় উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য আনতে উদ্যোগী হলেও, কংগ্রেসের কিছু সদস্যের আশঙ্কা, এতে মানবাধিকার ও নিরাপত্তা ইস্যুগুলো গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে।
চীন একদিকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় আদায়ে সচেষ্ট, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রও আলোচনায় বিঘ্ন এড়াতে চেষ্টা করছে। সোমবার স্টকহোমে দুই দেশের শীর্ষ বাণিজ্য কর্মকর্তাদের বৈঠকে শুল্কবিরতির মেয়াদ আরও ৯০ দিন বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
চীন চাইছে, তাদের পণ্যে শুল্ক এবং প্রযুক্তি রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ কমানো হোক। এর আগে মে ও জুন মাসে উভয় দেশ একটি প্রাথমিক বাণিজ্য চুক্তি করেছিল। এবার ১২ অগাস্টের মধ্যে শুল্ক নিয়ে টেকসই সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে।
এ প্রসঙ্গে জার্মান মার্শাল ফান্ডের এশিয়া বিশ্লেষক বনি গ্লাসার বলেন, “চীনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্টতই একটি অর্থনৈতিক চুক্তি করতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে, এবং এর মধ্যেই তার দলের এবং কংগ্রেস সদস্যদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবধান স্পষ্ট হচ্ছে।”
চীনবিরোধী তিনটি বিলের অন্যতম প্রস্তাবক ডেমোক্র্যাট সিনেটর জেফ মার্কলি বলেন, “বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের পথনির্দেশক হিসেবে স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের মূল্যবোধকে সব সময় অগ্রাধিকার দিতে হবে, তা হোয়াইট হাউজে যেই থাকুন না কেন।”
চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার বিষয়টিকে কংগ্রেসে একটি বিরল সর্বসম্মত মনোভাব হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তিনটি বিলের একটি প্রস্তাব করেছেন রিপাবলিকান সিনেটর জন করনিন। এতে চীনের বর্তমান ও সাবেক সেইসব কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে, যারা সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের ‘জোর করে দেশে ফেরত পাঠানোয়’ জড়িত বলে বিবেচিত।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়াংয়ে প্রায় ১ কোটি উইঘুর জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক নিপীড়ন চালাচ্ছে চীন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে চীন।
রিপাবলিকান সিনেটর জন কার্টিসের যৌথভাবে প্রস্তাব করা আরেকটি বিলে তাইওয়ানকে সহায়তা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের যেসব দেশের সঙ্গে তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, তাদের সমর্থন দেওয়া এবং তাইপের সঙ্গে নিবিড় সমন্বয় গড়ে তোলার বিষয়েও বলা হয়েছে।
তৃতীয় বিলটি প্রস্তাব করেছেন আলাস্কার রিপাবলিকান সিনেটর ডান সালিভান। এতে বলা হয়েছে, একটি দেশ যাতে তার সীমানার বাইরে গিয়ে কোনও ভিন্নমতাবলম্বী, সাংবাদিক বা মানবাধিকার কর্মীকে হয়রানি, ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা ভয়ভীতি না দেখাতে পারে—সেই লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নিতে হবে।