রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর বালাপাড়া গ্রামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় সবাই বাড়ি ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
শনিবার রাত থেকে রোববার পর্যন্ত দফায় দফায় হামলার পর সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ২২টি হিন্দু পরিবারের মধ্যে ১৯টি পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। বাকি তিনটি পরিবার পাশের আত্মীয়ের বাড়িতে আছেন। আটক রঞ্জন কুমার রায় ও তার চাচার পরিবার এই তিনটির মধ্যে রয়েছে।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামতের কাজ শুরু করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক। তিনি পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নিজ ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেন।
পুলিশ সুপার মো. আবু সাইম জানান, হামলায় ১২টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে ২২টি পরিবার বসবাস করতো। রঞ্জন কুমার আটক হওয়ার পর থেকেই তার বাবা, দাদা এবং চাচার পরিবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছে। অন্য ১৯টি পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বাড়িতেই আছেন। তবে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত থাকায় কিছু নারী সদস্য মালামাল নিয়ে রিকশাভ্যানে করে অন্যত্র চলে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, ঘরবাড়ি মেরামতের কাজ শেষ হলে নারী সদস্যরাও নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসবেন।
বর্তমানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিয়োজিত রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে হামলার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তের কাজ শুরু হয়েছে। যারা এই অপরাধে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শনিবার এক কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাকে থানায় নেওয়ার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন সন্ধ্যায় পাশের এলাকা থেকে শতাধিক মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে গ্রামে প্রবেশ করে এবং হামলা চালায়।
‘উত্তেজিত জনতা’ শনিবার রাতে ও রোববার বিকালে ওই কিশোরের বাড়িসহ অন্যান্য হিন্দু পরিবারের বাড়িতে ভাঙচুর করে। পরে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সোমবার আতঙ্কে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে যায়। মঙ্গলবার থেকে ধীরে ধীরে তারা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে, তবে এলাকায় এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে।