জুলাই ঘোষণাপত্র’ নামে পরিচিত ২৬ দফার একটি খসড়া দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে—এতে ২০২৪ সালের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের অঙ্গীকার রয়েছে। ঘোষণাপত্রে উল্লেখ রয়েছে, “বাংলাদেশের জনগণ নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থার যুক্তিসঙ্গত সময়ে অনুষ্ঠিত এক অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা অনুযায়ী আইনের শাসন, মানবাধিকার ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে। এবং বিশেষত, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ এর রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি সংবিধানের প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সংযুক্ত থাকবে।” এ ঘোষণা ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে কার্যকর বলে ধরা হবে।
এ খসড়া অবশ্য সে কাজের পরদিনই (মঙ্গলবার) অংশগ্রহণকারী দলগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে মতামতের জন্য।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা খসড়া হাতে পেয়েছি। দলীয় ফোরামে দ্রুত পর্যালোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে মতামত জানিয়ে দেব।”
জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস জানান, “জুলাই ঘোষণাপত্রের পাঁচপৃষ্ঠা খসড়া আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমরা দ্রুত মতামত জানাব।”
খসড়া ঘোষণাপত্রে যে বাণিজ্যিক বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে:
- পাকিস্তান আমলে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণ-প্রতিরোধ গড়ে মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ফলেই বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।
- ১৯৭২-এর সংবিধানতন্ত্রের কাঠামোয় আওয়ামী লীগ ব্যর্থতা ও সংবিধানবিরোধী ব্যবহারের ফলে প্রতিষ্ঠান ধ্বংস।
- বাকশাল একদলীয় শাসন, মতপ্রকাশ-অধিকার হরণ ও ১৯৭৫ সালের প্রতিক্রিয়াশীল বিপ্লব।
- ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।
- ১/১১ চক্রান্ত ও সংসদীয় গণতন্ত্র ভঙ্গ করার চেষ্টা।
- ২০০৮–২০২৪ পর্যন্ত একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসন ও সংবিধানবিরোধী সংস্কার।
- মানবতাবিরোধী অপরাধ, গুম-খুন ও গণবিরোধী শাসনব্যবস্থার নির্মূল দাবি।
- ৫ আগস্ট ২০২৪-এ অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে অবৈধ সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন।
- জনগণের সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে অবিচ্ছিন্ন গণতান্ত্রিক লড়াই ও তৎপরতা।
- একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনগণের ঐক্যবদ্ধ অভিপ্রায়।
জাতীয় ঐকমত্য প্রক্রিয়ায় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও জাতীয় সনদ তৈরির কাজ চলমান ছিল। চলতি মাসের প্রথমার্ধে দলীয় মতামত অনুযায়ী প্রধান খসড়া প্রস্তুত করা হয়—এখন চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুতির জন্য দলগুলোর মতামত সংগ্রহ চলছে।
দলগুলো একমত হলে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে এ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে, যাতে অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।