সরকারের যেকোনো ভুল সিদ্ধান্ত দেশের গণতন্ত্র উত্তরণের যাত্রাপথকে সঙ্কটে ফেলতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বুধবার বিকালে ঢাকার আশুলিয়ায় বিএনপির আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, “আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে পরাজিত পতিত পলাতক বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি রাষ্ট্র রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ নিতে ওঁৎ পেতে রয়েছে।
সরকারের যেকোনো ভুল সিদ্ধান্ত দেশে গণতন্ত্র উত্তরণের যাত্রাপথকে সঙ্কটে ফেলতে পারে। দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। কাজেই এ ব্যাপারে আমাদের সকলকে, বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।”
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়া থানা সংলগ্ন লাশ পোড়ানোর স্থানে ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পূর্বক্ষণে পুলিশের গুলিতে নিহতদের লাশ ভ্যানে করে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এ বিষয়ে একটি মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।
সরকারকে নাগরিকদের কথা শুনতে হবে
তারেক রহমান বলেন, সরকার এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে জনগণের মুখাপেক্ষী করা গেলে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন সম্ভব।
“তখন জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করাও সম্ভব হবে। কয়েকজন মানুষের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তুলে দেওয়ার জন্য দেশের সর্বস্তরের জনগণ নিশ্চয় দেড় দশক ধরে আন্দোলন অব্যাহত রাখেনি কিংবা জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে শহীদ হননি।
জনগণ রাষ্ট্র এবং সরকারে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যই স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদকে হটিয়েছে, জীবন উৎসর্গ করেছে। সুতরাং সরকারে যখন যারাই থাকুক, কেউ সরকার পরিচালনা করতে চাইলে তাদেরকে অবশ্যই নাগরিকদের কথা শুনতে হবে।”
তিনি বলেন, “প্রতিটি নাগরিকের আশা, ভাষা বুঝতে হবে। কেউ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে হলে তাকে অবশ্যই জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে। বিএনপি জনগণের ক্ষমতায়নের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শহীদদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চায়।”
তারেক রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ’ হটিয়ে জনগণ রাষ্ট্র ও সরকারে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার ভার অর্পণ করেছে।
“এখন জনগণের মালিকানা জনগণের হাতে দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মাঝে শোনা যায় যে সকল কথা…. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অংশ নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, শিক্ষাঙ্গন, স্থানীয় সরকার কিংবা জাতীয় সরকার—প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিএনপি জনগণের ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত করার পক্ষে।
“কিন্তু এইসব নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অগ্রাধিকার নির্ধারণে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারছে কিনা, এটি একটি বিরাট প্রশ্ন এই মুহূর্তে জনগণের সামনে।”
শহীদদের স্মরণে বিশেষ স্থাপনা
তারেক রহমান বলেন, “আমি আগেও বলেছি, শহীদগণ কিন্তু শুধুমাত্র একটি সংখ্যা নয়। একটি প্রাণের সমাপ্তির অর্থ একটি পরিবারের মৃত্যু, একটি স্বপ্ন-সম্ভাবনার অবসান। তবে আপনাদের সন্তান দেশ ও জনগণকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছে। দেশ আপনার শহীদ সন্তানের কাছে ঋণী।
প্রতিটি শহীদ পরিবারের প্রতি রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষ যাতে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অবদান নিয়ে গর্ব করতে পারে, শ্রমজীবী কর্মজীবী শহীদ পরিবারের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সদস্যরা যাতে তাদের স্বজনদের শহীদি মৃত্যু নিয়ে গৌরব করতে পারেন…
বিএনপি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে সাভার-আশুলিয়া কিংবা অন্য কোনো সুবিধাজনক এলাকায় শ্রমজীবী কর্মজীবী মানুষের আত্মত্যাগের সম্মানে একটি বিশেষ স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।”
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে ২০২৪-এর অভ্যুত্থান পর্যন্ত আত্মত্যাগ করা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, “আল্লাহ যেন প্রতিটি আত্মত্যাগকে শহীদি মৃত্যু হিসেবে কবুল করেন। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।”
শহীদ পরিবারের সদস্যদের মনের কথা তুলে ধরার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ঢাকা জেলা বিএনপিকে ধন্যবাদ জানান তারেক রহমান।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-পরিবার কল্যাণ বিষয়ক দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক।
এছাড়া শহীদ পরিবারের মধ্যে বক্তব্য দেন বাবুল হোসেনের স্ত্রী লাকি আখতার, আরাফাত মুন্সির বাবা স্বপন মুন্সি, বায়েজিদ মুস্তাফিজের স্ত্রী রিনা আখতার, শ্রাবণ গাজীর বাবা আবদুল মান্নান গাজী, মামুন খন্দকার বিপ্লবের স্ত্রী খন্দকার সাথী, সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম, আরাফুর রহমান রাসেলের ভাই সায়েদুর রহমান বাবু এবং জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে পঙ্গু হওয়া শান্ত।