চট্টগ্রামে ছয় ঘণ্টার বৃষ্টিতে আবারও জলাবদ্ধতা, মোহরায় স্থায়ী পানি

তিন দিনের মাথায় আবারও চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত নগরীতে ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

ছয় ঘণ্টার ভারি বৃষ্টিতে নগরীর কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, এ কে খান গেইট, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে যায়। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে পানি নামতে শুরু করে।

অন্যদিকে, নগরীর মোহরা এলাকায় গত ৪-৫ দিন ধরে হালদা নদীর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে আটকে আছে। সেখানে পানি না সরায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

আমবাগান আবহাওয়া দপ্তর জানায়, বেলা ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যমতে, একই সময়ে ৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টার মধ্যে বৃষ্টি হয়েছে ৬৪ মিলিমিটার।

পূর্বাভাস কর্মকর্তা আবদুর রহমান জানান, আগামীকাল ও পরশু বৃষ্টি হতে পারে, তবে তীব্রতা কিছুটা কমবে।

এর আগে সোমবার আগের ২৪ ঘণ্টায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। সেদিন বিকাল পর্যন্ত বন্দর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা ছিল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদে বক্স কালভার্ট পরিদর্শনে গিয়ে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “তিন দিন আগে ভারি বর্ষণের সঙ্গে জোয়ারের পানি যোগ হওয়ায় পানি উঠেছিল। মে মাসে ১৯২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও স্বস্তিকর অবস্থা ছিল। কিন্তু এবার ১০২ মিলিমিটারের পরও জোয়ারের কারণে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি হয়েছে।”

তিনি জানান, সব সেবা সংস্থাকে নিয়ে সমন্বয় সভা করা হবে। ইতোমধ্যে চান্দগাঁও, বহদ্দারহাট, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, চকবাজার, মুরাদপুর এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মেয়র বলেন, “এত সচেতনতা কার্যক্রম করছি, খালগুলো পরিষ্কার করছি—তবুও খালে ময়লা ফেলা হচ্ছে। এজন্য ‘ডোর টু ডোর’ প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের চিন্তা করছি। যতই পরিষ্কার করি না কেন, বাসাবাড়ির ময়লা একটা বড় কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”

গত ১৫-২০ বছর ধরে জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অনেক বাজেট দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি। এবার ৭-৮ মাসে অভাবনীয় পরিবর্তন দেখা গেছে। যেমন—বহদ্দারহাট-মুরাদপুর, খাতুনগঞ্জ এলাকায় এবার পানি ওঠেনি। তবে জোয়ার একটা কারণ হয়েছে।”

চলমান জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, “সব খাল এই প্রকল্পে নেই। স্লুইস গেট নির্মাণও এখনো হয়নি।”

মোহরার স্থায়ী জলাবদ্ধতার বিষয়ে তিনি বলেন, “হালদায় উঁচু জোয়ারের কারণে মোহরায় পানি ঢুকেছে। স্লুইস গেট না থাকায় পানি আটকে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানুয়ারির মধ্যে স্লুইস গেট নির্মাণ শেষ করবে বলে জানিয়েছে। আগামীবার এই সমস্যা আর হবে না।”

মেয়র আরও বলেন, বৃষ্টি থেমে যাওয়ার দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে পানি সরে গেলে সেটাকে জলাবদ্ধতা নয়, বরং জলজট বলা উচিত।