বসুন্ধরায় গোপন বৈঠক: ২২ জন গ্রেপ্তার, তদন্তে সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে

ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় অনুষ্ঠিত একটি ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ বৈঠকের তদন্তে পুলিশ বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ঘটনায় পেছনে জড়িতদের খুঁজে বের করার পাশাপাশি আসল উদ্দেশ্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের বর্ষপূর্তিকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে নানা ‘হুমকির’ গুঞ্জন থাকলেও পুলিশ বলছে, নিরাপত্তা নিয়ে তারা কোনো শঙ্কা দেখছে না।

পুলিশের ভাষ্য, গত ৮ জুলাই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পাশের কে বি কনভেনশন হলে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তিন থেকে চারশ জনের উপস্থিতিতে ‘সরকারবিরোধী স্লোগান’ দেওয়া হয় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরাকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

ওই ঘটনায় ১৩ জুলাই ভাটারা থানায় মামলা করে পুলিশ। এরপর এ পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সেনাবাহিনীর মেজর সাদিকুল হকও বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। এ কারণে তাকে হেফাজতে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সেনাবাহিনী।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, বৈঠকের জন্য হলটি ভাড়া নিয়েছিলেন শামীমা নাসরিন শম্পা নামের এক ব্যক্তি, যিনি সে সময় বিদেশে লোক পাঠানোর একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করেছিলেন।

তিনি বলেন, “ঘটনাটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। এর অন্য কোনো দিক আছে কি না এবং প্রকৃত দায়ীদের শনাক্ত করতেই আমরা কাজ করছি।”

এদিকে একইদিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আরও আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

গত এক বছরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘উন্নয়ন’ হয়েছে দাবি করে তিনি জানান, অগাস্ট মাসকে ঘিরে এখন পর্যন্ত কোনো নিরাপত্তা হুমকি দেখা যাচ্ছে না। রাজধানীতে ৪৮৯টি টহল টিম এবং ৬৬টি চেকপোস্ট পরিচালিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি ২৫৪ জনকে বিভিন্ন অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং মাদক, মোবাইল ফোন ও যানবাহন জব্দ করা হয়েছে।

এছাড়া গুলশানে সাবেক এক নারী এমপির বাসায় চাঁদা দাবির ঘটনায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ নামে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৬ জুলাই ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজন এবং পরবর্তীতে জানে আলম তপু নামে একজনকে গোপীবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে দুই কোটি টাকার চারটি চেক ও প্রায় তিন লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কি না—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির বাইরে দেশের সব ইউনিটের কার্যক্রম স্থগিত এবং তিনজন নেতাকে বহিষ্কার করেছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’।