ছাত্রশিবির নেতার দাবি: ‘শিবির লুকিয়ে থাকা’ ন্যারেটিভ সম্পূর্ণ মিথ্যা

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদেরের বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা মো. আবু সাদিক কায়েম। তিনি দাবি করেছেন, ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তা করার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

গতকাল রোববার মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এই দাবি করেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম।

এর আগে একই রাতে এক ফেসবুক পোস্টে আবদুল কাদের অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে হলে থাকার কারণে ছাত্রশিবিরের যারা সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগ করত, তারা মূলত আত্মপরিচয়ের সংকট থেকে উতরানোর জন্য কিছু ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ডে জড়াত। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সাদিক কায়েম এমন কয়েকজনকে বাঁচাতে তদবির করেন বলে উল্লেখ করেন কাদের।

সাদিক কায়েমের ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরা হয়—
১. বিপ্লবের পর দুটি কনসার্ন ছিল—প্রথমত, অপরাধের বিচার, দ্বিতীয়ত, বিচারের নামে নিরীহ কোনো ব্যক্তির হয়রানি না হওয়া।
সে সময় অনেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে জানান যে, ‘তারা ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত থাকলেও কোনো ফৌজদারি অপরাধ করেননি এবং ব্যক্তিগত আক্রোশে মামলায় তাদের নাম যুক্ত করা হচ্ছে।’
স্বাভাবিকভাবেই গণহারে মামলার আশঙ্কা থাকলে কে অপরাধী আর কে নিরপরাধ, তা যাচাই করার জন্য আন্দোলনে সক্রিয় নানা স্টেকহোল্ডারের কাছে তথ্য ফরওয়ার্ড করে পারস্পরিক ফিডব্যাকের ভিত্তিতে যাচাই করাটা জরুরি ছিল।
তাই বেশ কয়েকটি কনসার্ন বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পেয়ে তিনি এনসিপি নেতা ও সংস্কার কমিশনের সদস্য আরমান হোসেন এবং মাহিনকে ফরওয়ার্ড করেন অধিকতর তদন্তের জন্য।
তাদের বলা হয়, এমন একটি দাবি এসেছে যে তারা হামলায় যুক্ত ছিলেন না, এই দাবিটি খতিয়ে দেখতে, যাতে অসচেতনতা বশত নিরপরাধ কেউ ভিকটিম না হন।

তিনি দাবি করেন, এনসিপি থেকে শুরু করে সব দলের নেতারাই সে সময় এমন সুপারিশ পেয়েছেন এবং নিজেদের মধ্যে চালাচালি করেছেন যাচাই করার জন্য।
আবদুল কাদের নিজেও উল্লেখ করেছেন, মামলার তালিকাগুলো পারস্পরিক আলোচনা করে প্রস্তুত করা হয়েছে। তাহলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা ছাড়া কীভাবে বোঝা যাবে—কেউ অপরাধী নাকি হয়রানির শিকার?

৩. সাদিক কায়েম জানান, স্ক্রিনশটে যাদের নাম আছে, তারা কেউই শিবিরের কেউ না। ৫ আগস্টের পর থেকেও তারা শিবিরের কোনো পদে বা কর্মসূচিতে ছিলেন না।
ফলে, ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তা করার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে মন্তব্য করেন তিনি।

৪. সাঈদী নামের এক ছেলেকে মামলা থেকে বাঁচাতে বিভিন্ন জায়গায় কল করার অভিযোগকেও মিথ্যা দাবি করেন সাদিক।
তিনি বলেন, “সাঈদী অপরাধী, এবং তাকে বাঁচানোর কোনো প্রশ্নই আসে না।”

৫. মুহসিন হলের একজনকে নিয়ে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘উক্ত শাহাদাতকে আমি চিনিই না। কাদের লিখেছেন, “২৪ সালের সেপ্টেম্বরে মামলা হওয়ার পরে শাহাদাতকে নিয়ে একজন পোস্ট করেন। পরবর্তীতে ওই পোস্টদাতার সাথে সাদিক কায়েম যোগাযোগ করেন।”
আচ্ছা, আমি যদি ফোন দিতেই চাইতাম, তাহলে তো সেটা মামলা হওয়ার আগেই দেওয়ার কথা ছিল। মামলা হওয়ার পরে কেউ একজন ফেসবুকে পোস্ট দিলে সেই পোস্টদাতাকে ফোন দেওয়ার কী দরকার!’

তিনি আরও বলেন, “এলাকায় থাকতে কেউ যদি শিবির করে, পরে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শিবিরবিরোধী ভূমিকা নেয়, এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়।
এমনকি কেউ সাময়িকভাবে ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য শিবিরের সাথে যোগাযোগ রাখে, পরে অন্য সংগঠনে গিয়ে নেতিবাচক বা ইতিবাচক ভূমিকা নেয়—তাদের কৃতিত্ব বা অপরাধের দায়ভার শিবির নেবে কেন?”