জুলাই শহীদদের স্বপ্নেই গড়া হবে আগামী বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে একটি ভিডিও বার্তায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার সকালেই এই বার্তাটি দেশব্যাপী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রচার করা হয়।

তিনি বলেন, “জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ আমরা বৃথা যেতে দেব না। তাদের স্বপ্নই হবে আমাদের আগামী বাংলাদেশের নির্মাণরেখা। আজকের এই দিনে এটাই হোক আমাদের শপথ।”

প্রধান উপদেষ্টা জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এই দিনটি এখন ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করছে বাংলাদেশ।

বিকেল ৫টায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন সরকারপ্রধান। এতে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্য এবং আহত যোদ্ধারা অংশ নেবেন। আয়োজিত হয়েছে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।

ভাষণের মূল বক্তব্য

ভাষণের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পাঁচই অগাস্ট শুধু একটি দিবস নয়, এটি একটি প্রতিজ্ঞা, গণজাগরণের উপাখ্যান এবং ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতির পুনর্জন্মের দিন।”

তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণ করে বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দেশের মানুষ বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার ছিল। সরকারী চাকরিতে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও বৈষম্যমূলক কোটানীতির কারণে তরুণ প্রজন্ম হতাশায় নিমজ্জিত ছিল।

সরকারি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাফিয়াতন্ত্র গড়ে উঠেছিল বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, “এরা ছিল স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী শ্রেণি। গরিব মানুষের অর্থ লুট করে এরা টাকার পাহাড় গড়েছে।”

২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সরকারের সমালোচনায় গ্রেপ্তার, গুম ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “যারা ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে।”

২০২৪ সালের জুলাইয়ে সাধারণ মানুষ, ছাত্র ও তরুণ সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়াজ তোলে—“এবার ফ্যাসিবাদকে যেতে হবে”। এই আন্দোলনের সময় সরকার গুলি চালায়, ইন্টারনেট বন্ধ করে, তথ্য গোপন করে এবং আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করতে দেয়নি।

 

জুলাই শহীদ ও আহতদের স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “তাদের আত্মত্যাগই হবে আমাদের পথচলার প্রেরণা।”

শহীদ ও আহতদের জন্য সরকারি উদ্যোগ

ভাষণে জানানো হয়, জুলাই আন্দোলনে নিহত ৮৩৬ শহীদের মধ্যে ৭৭৫ পরিবারকে এখন পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র ও মাসিক ভাতা বাবদ ৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্টদের ক্ষেত্রেও প্রক্রিয়া চলমান।

আহত ১৩ হাজার ৮০০ জনকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে মোট ১৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত ৭৮ জনকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসা বাবদ ব্যয় হয়েছে ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে আহতদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসা দিতে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শেষে তিনি বলেন, “আজ আমরা অতীত স্মরণে নয়, শপথ নিতে এসেছি—কোনো নিপীড়নের কাছে মাথা নোয়াব না। প্রতিষ্ঠা করব এক মানবিক, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন ও জনকল্যাণকামী রাষ্ট্র।”

তিনি সবার সহায়তা কামনা করে ভাষণ শেষ করেন: “মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আল্লাহ হাফেজ।”