ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা অনুমোদনের পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্তকে ‘বিপজ্জনক’ আখ্যা দিয়ে কড়া নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা।
রোববারের বৈঠকে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বলেন, ইসরায়েল গাজায় লড়াইয়ের তীব্রতা বাড়ানোর বেপরোয়া পরিকল্পনা নিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের বড় লঙ্ঘন। তিনি উল্লেখ করেন, পরিকল্পনার আগে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় হামাসের হাত থেকে ১৪০ জনের বেশি জিম্মি মুক্তি পেয়েছিল, কিন্তু এখন সহিংসতা বাড়িয়ে ইসরায়েল জিম্মিদের জীবনকেই ঝুঁকিতে ফেলছে।
পলিয়ানস্কি আরও অভিযোগ করেন, গাজায় ইসরায়েলের কার্যক্রম মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে।
জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ফু বলেন, গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহভাবে অবনতির পথে যাচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদকে যেকোনও গাজা দখল প্রচেষ্টা রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের নিন্দা জানিয়ে গাজার সব প্রবেশপথে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানান।
ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, গ্রিস ও স্লোভেনিয়ার যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলের পরিকল্পনার কড়া নিন্দা জানিয়ে তা অবিলম্বে বাতিল করার আহ্বান জানানো হয়। তারা একে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে।
স্পেন, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নরওয়ে, পর্তুগাল ও স্লোভেনিয়ার পক্ষ থেকেও আলাদা বিবৃতিতে সতর্ক করা হয়—গাজা সিটি দখল হলে তা মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জিম্মিদের মুক্তি ও গাজাকে ‘মুক্ত’ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু জাতিসংঘের এই জরুরি বৈঠক সে প্রচেষ্টা ব্যাহত করছে। তিনি অভিযোগ করেন, ইসরায়েল তিনটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিলেও হামাস তা প্রত্যাখ্যান করেছে; আজ যুদ্ধ থামতে পারত যদি হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিত।
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করে তাদের ভূমি দখলের লক্ষ্যে এগোচ্ছে এবং নিরাপত্তা পরিষদের কথার তোয়াক্কা করছে না। তিনি বলেন, শুধু সমর্থনের ভাষণ যথেষ্ট নয়—এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে এবং গাজা দখল পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে।
ইসরায়েলের প্রতিনিধি জোনাথন মিলার দাবি করেন, গাজা স্থায়ীভাবে দখলের কোনও পরিকল্পনা নেই। তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ঘোষিত পাঁচটি নীতি তুলে ধরেন—হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ; জিম্মিদের বাড়ি ফেরানো; গাজাকে বেসামরিকীকরণ; বাড়তি নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা; ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ ও হামাসকে বাদ দিয়ে বিকল্প বেসামরিক প্রশাসন গঠন।