দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচার’ সংক্রান্ত মামলা করেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার দায়িত্ব থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি ৬০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
দুদক আরও জানিয়েছে, জয়ের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক লেনদেন, দুর্নীতি এবং ঘুষ গ্রহণের অভিযোগও আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুদকের সহকারী পরিচালক এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর মামলা দায়ের করেছেন। সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, ২০০০ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে জয় এই সমস্ত অবৈধ সম্পদ অর্জন, ঘুষ-দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে যুক্ত ছিলেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, জয় তার সরকারি দায়িত্ব ব্যবহার করে মোট ৬০ কোটি ৮৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭০ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন, যা তার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে দুটি বাড়ি কেনায় ও বিনিয়োগে ব্যয় করা হয়েছে ৫৪ কোটি ৪ লাখ ৩২ হাজার ২৯৮ টাকা। দুদক বলেছে, আয়কর রিটার্নে আয়ের উৎস দেখানো বাধ্যতামূলক হলেও তিনি তা করেননি এবং বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, জয় নিজের নামে দুটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ২২ হাজার ৯৭ টাকা লেনদেন করেছেন। সন্দেহজনক লেনদেনের পরিমাণ মোট ৯৭ কোটি ৫০ লাখ ৫৪ হাজার ৩১৫ টাকা। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
তদন্তে দুদক জানিয়েছে, জয়ের নামে মোট ৫৪ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার ৯৭৮ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৮৪ হাজার ৮৯১ টাকার অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে। তার মোট ব্যয়ের পরিমাণ ২৮ লাখ ৭৬ হাজার ৬৪৩ টাকা। সব মিলিয়ে মোট সম্পদের পরিমাণ ৬১ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার ৫১২ টাকা, যেখানে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শিত আয় ছিল মাত্র ১ কোটি ৩২ লাখ ৮৬ হাজার ৪৮১ টাকা।
দুদক জানিয়েছে, জয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে দুটি বাড়ি কিনেছেন এবং বিনিয়োগ করেছেন। দেশের আয়কর রিটার্নে তা দেখানো হয়নি এবং অর্থ বিদেশে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের পর যদি আরও কোনো অবৈধ সম্পদ বা অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার স্থান হিসেবে ঢাকা ও অন্যান্য স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে।
এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ছয়টি প্লট বরাদ্দের বিষয়ে দুদক গত ডিসেম্বরে অনুসন্ধান শুরু করে। এরপর আরও একে একে পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় শেখ রেহানা, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীও আসামি।
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মামলায় গত ৩১ জুলাই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা এবং তাদের সন্তানসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে ঢাকার দুই বিশেষ জজ আদালত। এর মধ্যে তিন মামলায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে জয় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে ১১ অগাস্ট।
এদিকে, শেখ হাসিনা ও পরিবারের সদস্যদের ১২৪টি ব্যাংক হিসাব থেকে ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।