সহানুভূতিশীল বিচারক হিসেবে অনলাইনে খ্যাতি পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও মারা গেছেন। ‘কট ইন প্রভিডেন্স’ নামে রিয়েলিটি কোর্ট শোর উপস্থাপক ক্যাপ্রিওর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
বুধবার তার মৃত্যুর খবর জানিয়ে সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে বলা হয়, অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ ও সাহসী লড়াইয়ের পর শান্তিতে পরলোকগমন করেছেন তিনি।
ক্যাপ্রিও তার আদালতকে এমন এক স্থান হিসেবে বর্ণনা করতেন, যেখানে মানুষ ও মামলার সঙ্গে সদয় ও সহানুভূতিশীল আচরণ করা হয়। জরিমানা মওকুফ বা ন্যায়বিচার প্রশ্নে দয়াশীল হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি।
গত সপ্তাহে তিনি ফেইসবুকে একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ার তথ্য দিয়ে ফের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা জানান এবং সবাইকে প্রার্থনা করার অনুরোধ জানান।
তার অনুষ্ঠানটি আদালতকক্ষে ধারণ করা হত, যেখানে তার সহজ-সরল হাস্যরস ও সহানুভূতি ফুটে উঠতো। এ অনুষ্ঠানের ক্লিপগুলো সোশাল মিডিয়ায় ১ বিলিয়নের বেশি বার দেখা হয়েছে।
বিচারক হিসেবে ক্যাপ্রিও ছিলেন আলাদা ধরণের ব্যক্তিত্ব। তিনি আক্রমণাত্মক ছিলেন না, বরং ছিলেন সহানুভূতিশীল। ইউটিউবে ছোট ছোট ভিডিওতে তাকে প্রায়ই আদালতকক্ষে আসা মানুষের প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে দেখা যায়। ছোট অভিযোগের ক্ষেত্রে তিনি প্রায়ই কেবল সতর্ক করতেন।
বিচার ব্যবস্থায় যে সবার সমান প্রবেশাধিকার নেই, সেই বাস্তবতা তুলে ধরতেও নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি। এক ভিডিওতে ক্যাপ্রিও বলেছিলেন, “সবার জন্য স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার- বাক্যাংশটি এ ধারণা তৈরি করে যে ন্যায়বিচার সবারই পাওয়ার কথা। কিন্তু আদতে তা নয়।”
তার ভিডিওগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল যেগুলোতে তিনি শিশুদের বিচারকের আসনে বসিয়ে তাদের বাবা-মায়ের বিচার করতে সহায়তা করতেন।
এক ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনছেন এক নারীর কথা, যার ছেলে হত্যার শিকার হয়েছে। পরে ওই নারীর ৪০০ ডলারের জরিমানা বাতিল করেন। অন্য এক ক্লিপে দেখা যায়, ঘণ্টায় ৩ দশমিক ৮৪ ডলার আয় করা এক বারটেন্ডারের মামলা খারিজ করে দিয়ে তিনি দর্শকদের সতর্ক করেন, যেন খাবার খেয়ে কখনো বিল না দিয়ে পালিয়ে না যান।
তার পরিবার তাকে একজন বিশ্বস্ত স্বামী, পিতা, দাদা, পিতামহ ও বন্ধু হিসেবে বর্ণনা করেছে। তারা বলেছে, তার সহানুভূতি, বিনয় এবং মানুষের ভালোর প্রতি অটল বিশ্বাসের কারণে তিনি সবার প্রিয় ছিলেন। আদালতের ভেতরে-বাইরে নিজের কাজের মাধ্যমে তিনি কোটি মানুষের জীবন স্পর্শ করেছেন।
রাষ্ট্রীয় এবং স্থানীয় রাজনীতিকরা তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। রোড আইল্যান্ডের গভর্নর ড্যান ম্যকি বলেন, জাজ ক্যাপ্রিও উষ্ণতা ও সহানুভূতিশীল আচরণের কারণে সহজেই মানুষকে আপন করে নিয়েছিলেন।
ব্যবসায়িক অংশীদার রবার্ট লিওনার্ড বলেন, তিনি ছিলেন সব মিলিয়ে অসাধারণ এবং সাধ্যে থাকলে কাউকে সহায়তা করতে পিছ পা হতেন না।
ক্যাপ্রিও চার দশক বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০২৩ সালে অবসরে যান। তিনি বড় হয়েছেন রোড আইল্যান্ডের প্রভিডেন্স শহরের ফেডারেল হিল এলাকায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
২০১৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে ক্যাপ্রিও বলেছিলেন, “আমি আশা করি মানুষ বুঝবে যে, সদয়, ন্যায়পরায়ণতা ও সহানুভূতির মাধ্যমে চমৎকারভাবে সরকার পরিচালনা করা সম্ভব। আমরা তীব্র বিভাজিত একটি সমাজে বাস করছি। আমি চাই মানুষ দেখুক যে, পীড়ন ছাড়াই ন্যায়বিচার দেওয়া সম্ভব।”
যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও মারা গেছেন। মানবিক রায় ও সহানুভূতিশীল আচরণের জন্য তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিত ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ ও সাহসী লড়াইয়ের পর শান্তিতে মৃত্যু হয়েছে তার।
‘কট ইন প্রভিডেন্স’ নামে আদালতকক্ষে ধারণ করা রিয়েলিটি কোর্ট শোর মাধ্যমে তিনি বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। অনুষ্ঠানটির ক্লিপ সোশাল মিডিয়ায় এক বিলিয়নেরও বেশি বার দেখা হয়েছে।
তার আদালতে শাস্তির চেয়ে সহানুভূতির দিকটিই বেশি প্রাধান্য পেত। ছোটখাটো অপরাধে জরিমানা না করে সতর্ক করতেন তিনি। শিশুদের বিচারকের আসনে বসিয়ে মামলার রায় দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার ঘটনাগুলো দর্শকদের কাছে ছিল বিশেষ জনপ্রিয়।
বিচার ব্যবস্থায় বৈষম্য তুলে ধরতে নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েছিলেন ক্যাপ্রিও। তার ভাষ্যে, প্রায় ৯০ শতাংশ নিম্ন-আয়ের মানুষ নাগরিক বিষয়গুলোতে একাই লড়াই করতে হয়।
তার জীবনের নানা সময়ে করা মানবিক রায়ের ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত হয়। এক ঘটনায় তিনি একজন মায়ের জরিমানা বাতিল করেন, যিনি তার সন্তানের হত্যার শিকার হওয়ার কষ্ট বর্ণনা করছিলেন। আরেক ঘটনায় এক দরিদ্র শ্রমিকের মামলা খারিজ করে দিয়ে তিনি অন্যদের সতর্ক করেছিলেন যেন বিল না মিটিয়ে পালিয়ে না যান।
পরিবারের বর্ণনায়, তিনি ছিলেন একজন বিশ্বস্ত স্বামী, পিতা, দাদা, পিতামহ ও বন্ধু। সহানুভূতি ও মানুষের ভালোর প্রতি বিশ্বাসের কারণে কোটি মানুষের জীবনে তার প্রভাব ছিল গভীর।
রাজনীতিক ও স্থানীয় নেতারাও তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। রোড আইল্যান্ডের গভর্নর তাকে সমানুভূতির প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সহকর্মী ও বন্ধু রবার্ট লিওনার্ড জানিয়েছেন, সাধ্যের মধ্যে থেকে তিনি সবসময় অন্যকে সাহায্য করতে চাইতেন।
প্রায় চার দশক বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০২৩ সালে অবসরে যান ক্যাপ্রিও। রোড আইল্যান্ডের প্রভিডেন্স শহরের ফেডারেল হিলে তার শৈশব কেটেছে।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, সহানুভূতি দিয়েও ন্যায়বিচার সম্ভব এবং এটি সরকার পরিচালনার একটি কার্যকর উপায় হতে পারে।