সাদাপাথর লুটের অভিযোগ অস্বীকার করলেন জামায়াত ও এনসিপি নেতারা

  • ‘ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ অভিযোগ দাবি দুই দলের

সিলেটের সাদাপাথর লুটে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ পর্যায়ের চার নেতা। বৃহস্পতিবার জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা বিষয়টিকে ‘বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর’ দাবি করে উল্টো অভিযোগ করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চলছে।

এর আগে ১৩ আগস্ট সাদাপাথর লুটের ঘটনাস্থলে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাঁচ সদস্যের একটি এনফোর্সমেন্ট দল। তারা ফিরে ঢাকায় কমিশনে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাদাপাথর লুটপাটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৪২ জন রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তালিকায় বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আছেন। এর মধ্যে জামায়াত ও এনসিপির দুজন করে চারজন নেতা রয়েছেন।

দুপুরে নগরের বন্দরবাজার এলাকায় জামায়াতের মহানগর কার্যালয়ে জেলা ও মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে বলা হয়, পাথর লুটের ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে জামায়াত নেতাদের নিয়ে অপপ্রচার চলছে। পাথর লুট দূরে থাক, কোনো অন্যায় ও অপকর্মের সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই।

দুদকের লুটেরার তালিকায় থাকা ৪২ জনের মধ্যে মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীনের নাম রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত নেতারা দাবি করেন, পাথর লুটে তাঁদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই; ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁদের নাম প্রচার করা হচ্ছে। এ ছাড়া দুদক আদৌ এ ধরনের কোনো প্রতিবেদন দিয়েছে কি না, সে ব্যাপারেও তাঁরা নিশ্চিত নন।

মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম তাঁর ও জেলার সেক্রেটারির নাম লুটের ঘটনার সঙ্গে জড়ানোর বিষয়টিকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা’ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ও বৈধ পন্থায় পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে পরিবহনমালিক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের কর্মসূচিতে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে জামায়াত নেতারাও বক্তব্য দেন। ওই কর্মসূচিতে রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক রিপোর্ট প্রকাশ ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অথচ ওই বক্তব্যের সঙ্গে পাথর লুটের কোনো সম্পর্ক নেই।

জামায়াতের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট অঞ্চলের টিম সদস্য হাফিজ আবদুল হাই হারুন, মহানগরের নায়েবে আমির নূরুল ইসলাম বাবুল, জেলা সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, মহানগরের সহকারী সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী, জেলা সহকারী সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

এদিকে দুদকের তালিকায় এনসিপির জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন ও মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরীর নামও রয়েছে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এনসিপি নেতারা নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

  • এনসিপি নেতা নাজিম উদ্দিন ও আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সাদাপাথর লুটের মূল অপরাধীদের আড়াল করতে তাঁদের নাম যুক্ত করা হয়েছে। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ। একই সঙ্গে তাঁরা সাদাপাথর ছাড়াও সিলেটের অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রের ক্ষতি ও লুটপাটে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়, সাদাপাথর লুটপাটের ঘটনায় এনসিপির কোনো নেতা-কর্মী জড়িত নন। অথচ কিছু গণমাধ্যমে জেলা ও মহানগরের দুজন শীর্ষ নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এটা ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যমূলক ও দুঃখজনক।

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলার যুগ্ম সমন্বয়ক আবু সাঈদ, সালমান খুর্শেদ, সদস্য মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, মুফতি মাওলানা ছালিম আহমদ, মহানগরের যুগ্ম সমন্বয়ক নুরুল হক, তারেক আহমদ, মোহাম্মদ আবদুর রহমান প্রমুখ।

এর আগে বুধবার বিকেলে সাদাপাথর লুটে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ সম্মেলন করেন মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।