রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাজীবন ঝুঁকিতে: প্রাথমিক স্তরের প্রায় দেড় লাখ শিশু স্কুলে যেতে পারছে না

কক্সবাজারে শুরু হওয়া তিন দিনের সম্মেলনের সময়ই ইউনিসেফ জানাল, রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাজীবনে বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স জানান, অর্থ সংকট মোকাবিলা করতে চেষ্টা করলেও তারা প্রায় দেড় লাখ কেজি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীকে স্কুলে যেতে বাধ্য করতে পারছেন না।

ফ্লাওয়ার্স বলেন, “ক্যাম্পে অন্যান্য সংস্থা কিছু শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। আমরা আশা করি, অর্থ সহায়তা পেলে তারা শিশুদের পড়াশোনা চালিয়ে আনতে পারবে। এরপর এই শিশুরা ইউনিসেফের খোলা ক্লাসগুলোতে ভর্তি হবে।”

তিনি আরও জানান, তার ৩০ বছরের কর্মজীবনে এত গভীর অর্থ সংকট তিনি আগে দেখেননি। “প্যালেস্টাইনসহ অন্যান্য যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে মনযোগ চলে গেছে। তবে ইউনিসেফ চেষ্টা করছে, রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার দিকে নজর দিতে।”

জাতিসংঘ কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন, প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা শিশু শিক্ষার আওতায় ছিল। ৭৫ শতাংশ শিশু ইউনিসেফের অধীনে পড়াশোনা করতো। এছাড়া কম অর্থায়নের কারণে প্রাথমিক পর্যায়ে ইংরেজি শিক্ষা বন্ধ করতে হয়েছে, যা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান ‘পলিসি-বিরুদ্ধ’ বললেও ইউনিসেফ তা অস্বীকার করছে।

স্থানীয় শিক্ষক সমস্যার প্রসঙ্গে ফ্লাওয়ার্স বলেন, এক হাজার ১৭৯ জন বাংলাদেশি শিক্ষক চাকরি হারালেও বর্তমানে এক হাজার ৩৭০ জন কর্মরত আছেন। ক্যাম্পে তিন হাজার ৮৭৩ জন রোহিঙ্গা শিক্ষক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে, তবে অনেকের বেতন বন্ধ রয়েছে।

তিনি সতর্ক করেন, চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলন ও ‘ভায়োলেন্স বক্তব্য’ চলমান প্রকল্পে ক্ষতি করতে পারে এবং অংশীদারদের ভীত-সন্ত্রস্ত করছে।

ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ। প্রতি বছর এ অঞ্চলে জন্ম নেয় ৩০ হাজার শিশু।

রোহিঙ্গাদের ‘নিরাপদ প্রত্যাবাসন’সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কক্সবাজারে তিন দিনের সম্মেলন শুরু হয়েছে। এতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনের থিম্যাটিক অধিবেশনের মধ্যে মানবিক সহায়তা ও তহবিল সংকটও গুরুত্বপূর্ণভাবে আলোচিত হবে।

রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী খিন মং বলেন, “আমাদের দায়িত্ব হলো আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে যুক্ত থাকা, ক্যাম্পে শান্তি বজায় রাখা এবং শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমাদের প্রত্যাবাসন।”