ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি প্রার্থী জালাল আহমদ ওরফে জ্বালাময়ী জালালকে রুমমেটকে হত্যাচেষ্টার মামলায় কারাগারে রাখার আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম মিনহাজুর রহমান তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন।
কারাগারে আটক রাখার আবেদনের বিপরীতে জালালের আইনজীবী জায়েদুর রহমান জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নাকচ করেন, জানায় শাহবাগ থানার আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই জিন্নাত আলী।
জালাল টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্ম বিভাগের ২০১৮-২০১৯ সেশনের শিক্ষার্থী এবং হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের ৪৬২ নম্বর কক্ষে আবাসিক ছিলেন। মঙ্গলবার মধ্যরাতে তিনি রুমমেট মো. রবিউল হককে মারধর ও ভাঙা টিউব লাইট দিয়ে আঘাত করার অভিযোগ ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে পুলিশে সোপর্দ করে। মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম শাহবাগ থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই মো. আসাদুল ইসলাম জালালকে আদালতে হাজির করে কারাগারে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানিতে জালালের আইনজীবী বলেন, “রুমমেট অবৈধভাবে হলে থাকেন। এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়েছে। তার রিম্যান্ড আবেদন নেই, ভিকটিমের মেডিকেল সার্টিফিকেট নেই। তাই জামিনের আবেদন করছি।”
রাষ্ট্রপক্ষে কাইয়ুম হোসেন নয়ন জামিনের বিরোধিতা করেন। আদালতে জালাল জানান, রুমমেট তার হাত মারধরের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার রুমমেটকে হলে ছাড়ার কথা ছিল, কিন্তু তিনি যাননি। আমি হাই কোর্টে রিটের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। বিষয়টা সে জানার পর আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে।”
বিচারক জিজ্ঞেস করেন, ডাকসু নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী কিনা, জবাবে জালাল বলেন, হ্যাঁ। জামিনের জন্য আবেদন করলেও আদালত জালালের আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
জালালের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ:
মামলায় বলা হয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রবিউল রাত ১২টার দিকে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে জালাল ঘরে ঢুকে লাইট জ্বালান ও চেয়ার টেনে ‘বিকট’ শব্দ করতে শুরু করেন। রবিউল তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলে তর্ক হয় এবং জালাল কাঠের চেয়ার দিয়ে মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করেন।
এরপর জালাল ভাঙা টিউব লাইট দিয়ে রবিউলের মাথা ও বুকের বাঁ পাশে আঘাত করলে তিনি হাত দিয়ে প্রতিহত করেন। এতে হাত কেটে যায়। পরে অন্য শিক্ষার্থীরা এসে রবিউলকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
মামলায় বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে জালাল প্রাথমিকভাবে ঘটনার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। মামলার গুরুত্ব ও চাঞ্চল্য বিবেচনায় তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে রাখার প্রয়োজন আছে।
রাতের ঘটনার পর জালাল ফেসবুকে নিজের আহত হওয়া ও ক্ষতচিহ্নের ছবি পোস্ট করে পাল্টা অভিযোগ করেন। তিনি রবিউলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেন এবং জানান, “অবৈধ ও বহিরাগত শিক্ষার্থীদের বের করার দাবিতে উকিল নোটিস পাঠানোর প্রাক্কালে আমার রুমমেট আমাকে আঘাত করেছে।”
ঘটনার পর জালাল কিছুক্ষণ কক্ষের ভিতরে অবস্থান করেন। প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টরিয়াল টিম এবং শিক্ষার্থীরা কক্ষের বাইরে জড়ো হন। ভোর ৪টার দিকে তাকে কক্ষ থেকে বের করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। শিক্ষার্থীরা তার ছাত্রত্ব বাতিল ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে হলের অধ্যক্ষ ঘোষণা দেন, “জালালকে হল থেকে বহিষ্কার করা হলো। তার ছাত্রত্ব বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে হল কর্তৃপক্ষ।”