গণভোটের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন বিরোধ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে, ঠিক তখনই প্রধান উপদেষ্টা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও উপস্থিত ছিলেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, “গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে নানা মত থাকলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা নিজেই। আমরা কেবল তাঁর সহায়তার জন্য আছি। এটি কোনো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়—এ বিষয়ে সবাই নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে তাদের সুপারিশপত্র প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেয়। সেই সুপারিশে জাতীয় নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে বিষয়টি ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান একেবারে বিপরীতমুখী। জামায়াতে ইসলামী বলেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট করে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে। অন্যদিকে বিএনপি জানিয়ে দিয়েছে, নির্বাচনের দিনই গণভোট হতে হবে—এর বাইরে কোনো বিকল্প আলোচনার সুযোগ নেই।
বিএনপি আরও অভিযোগ করেছে, জুলাই সনদের যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করেছিল, তার বাইরে বেশ কিছু নতুন বিষয় সুপারিশে যুক্ত করা হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “২৭০ দিন আলোচনার পরও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে অনৈক্য দেখা যাচ্ছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। এই তীব্র বিরোধের মধ্যে সমঝোতার দলিল পাস করা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।”
তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোকে দীর্ঘ সময় দেওয়া হয়েছিল আলোচনার জন্য। তবু যদি তারা ঐকমত্যে না পৌঁছায়, তাহলে জুলাই সনদের চেতনা কোথায় গেল, তা তাদের ভাবা উচিত। তারা যদি একক অবস্থানে অনড় থাকে, তবে বোঝা যায়—তারা সরকারের মাধ্যমে নিজেদের দলীয় অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে চায়।”
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে অনৈক্যের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, “যে যাই বলুক, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা সেটার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।”
তিনি আরও বলেন, “সংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর সংস্কার কার্যক্রম চালানোর দায়িত্ব একমাত্র অন্তর্বর্তী সরকারের নয়। যতটা সম্ভব কাজ বর্তমান সরকারই করবে। তবে এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রয়োজন।”
