আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে একটি বড় পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাষ্ট্রদূত মিলার জানান যে ইইউর পর্যবেক্ষক মিশন এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে এতে ১৫০ থেকে ২০০ সদস্য থাকতে পারেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভোটের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে, বাকিরা এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন।
তিনি আরও জানান, ২০০৮ সালের পর এই প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে যাচ্ছে। নির্বাচনের সময় স্থানীয় পর্যবেক্ষক দল গঠনের ক্ষেত্রেও ইইউ সহায়তা করবে।
প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে উভয়ে আলোচনা করেন সুশাসন, সাংবিধানিক সংস্কার, নির্বাচন প্রস্তুতি, বিচার বিভাগ ও শ্রম সংস্কার, পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে।
রাষ্ট্রদূত মিলার বৈঠকে বলেন, সম্প্রতি অনুমোদন পাওয়া শ্রম আইন সংস্কার এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা জোরদারের উদ্যোগগুলো উল্লেখযোগ্য সাফল্য, যা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
তিনি জুলাই জাতীয় সনদকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের গুরুত্বপূর্ণ দলিল বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, এসব পদক্ষেপ দেশের অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
রাষ্ট্রদূত মিলার নির্বাচন কমিশনের প্রচেষ্টার প্রতি ইইউর অব্যাহত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং আসন্ন নির্বাচনকে বাংলাদেশের জন্য ‘সুনাম পুনরুদ্ধারের একটি সুযোগ’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
এ সময় তিনি বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় ইইউর সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাসও দেন।
বৈঠকে আরও আলোচনা হয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক গভীর করা, অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির সম্ভাবনা, এবং বিমান ও শিপিং খাতে নতুন সুযোগ অনুসন্ধান নিয়ে।
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া টার্মিনাল উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শিপিং কোম্পানি এপি মোলার-মার্স্ক–এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে।
রাষ্ট্রদূত মিলার জানান, ডেনিশ এই কোম্পানি প্রায় ৮০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে লালদিয়াকে এই অঞ্চলের অন্যতম আধুনিক টার্মিনালে রূপ দিতে আগ্রহী।
বৈঠকে নির্বাচনি পরিবেশ, প্রার্থী যোগ্যতা, মানবাধিকারের সুরক্ষা, এবং আইনি প্রক্রিয়ার যথাযথতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা হয়।
