আইসিসিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর ‘সহিংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগ

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যাসহ নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং নির্যাতনের অভিযোগে নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-তে তদন্তের আবেদন জমা হয়েছে।
ব্রিটিশ আইনজীবী স্টিভেন পাওলস লন্ডনের ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের পক্ষে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করে এই আবেদন দাখিল করেছেন। চেম্বারের এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

জুলাই মাসের অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত প্রতিশোধমূলক সহিংসতার তদন্ত চেয়ে রোম সংবিধির ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রসিকিউটরের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ২০১০ সালের ২৩ মার্চ রোম সংবিধিতে অনুসমর্থন করে এবং একই বছরের ১ জুন থেকে এটি কার্যকর হয়।

এই অভিযোগ এমন এক সময় এসেছে, যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার অপেক্ষায়।
২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টে আন্দোলন দমনের সময় ১,৪০০ জনকে হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা ও উসকানির অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড দাবি করে প্রসিকিউশন।
ওই বছরের ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর তিনি ভারতে আশ্রয় নেন এবং এখনো সেখানেই অবস্থান করছেন।

আইসিসিতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের অনেককেই জনতার হাতে পিটিয়ে মারা হয়েছে।
বিভিন্ন ঘটনার ভিডিও ও সাক্ষ্যসংবলিত বিস্তারিত তথ্যও ওই নথিতে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এসব হত্যা, বেআইনি আটক ও নির্যাতন আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতাভুক্ত, এবং দেশে এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার হওয়ার বাস্তব সম্ভাবনা নেই।
এছাড়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ব্যক্তিদের অভিযোগ ছাড়াই গ্রেপ্তার ও জামিনহীন আটক রাখার কথাও সেখানে বলা হয়েছে।

রাজনীতিক, বিচারক, আইনজীবী, সাংবাদিক, অভিনেতা ও সংগীতশিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এই নিপীড়নের শিকার— এমন দাবিও উত্থাপন করা হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, কারাগারে অন্তত ২৫ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকে ‘হৃদরোগে মৃত্যু’ বলা হলেও শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

স্টিভেন পাওলস জানান, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকার ‘ডেভিল হান্ট’ নামে একটি অভিযান চালায়, যার ঘোষিত লক্ষ্য ছিল ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদ দমন’। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে ১২ দিনের মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার একটি ‘ইমিউনিটি অর্ডার’ জারি করে, যাতে বলা হয়— ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে আন্দোলনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা গ্রেপ্তার করা যাবে না।
এই দায়মুক্তি অপরাধীদের পার পাওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে এবং রাষ্ট্রের নীরব সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

আবেদনে মতামত দেওয়া হয়েছে, এসব অপরাধের তদন্তের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায় নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় প্রতিশোধমূলক সহিংসতা এখন বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয়, এবং এই ধরনের অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এখতিয়ারের মধ্যেই পড়ে।