অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মন্তব্য করেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ‘সঠিকভাবে’ পালন করতে পারলে বাংলাদেশ অতীত থেকে মুক্ত হতে পারবে।
মঙ্গলবার দুপুরে ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা হস্তান্তরের পর তিনি এ মন্তব্য করেন। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তাদের সুপারিশমালা সরকারপ্রধানের হাতে তুলে দেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস অফিস থেকে তার বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ সংবাদমাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আজকে একটা মহান ঐতিহাসিক দিবস। আমরা শুরু করেছিলাম অভ্যুত্থান, তারপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল জুলাই ঘোষণা। জুলাই ঘোষণার পরে জুলাই সনদ। আজকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিন—এই জুলাই সনদের বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এটা ঐতিহাসিক পরিবর্তন।”
দীর্ঘ এক বছরের আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার সম্বলিত জুলাই জাতীয় সনদ গত ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হয়। ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়া ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিলে সই করেছেন।
তবে জুলাই অভ্যুত্থানের সামনের সারির ছাত্রনেতাদের নিয়ে গড়া রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ও বাম ধারার চার দল—বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদ ও বাসদ-মার্কসবাদী—জুলাই সনদ স্বাক্ষর করেনি।
সংস্কার উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা জুলাই সনদে নির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার কারণে আলাদাভাবে আলোচনা করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ঐকমত্য কমিশন তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আজকে কমিশন আমাদের হাতে যেটা দেবে, সেটার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটা যদি আমরা সঠিকভাবে পালন করতে পারি এবং কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ অতীত থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। এটি হল—আমরা সেই অতীত থেকে মুক্ত হতে চাই, নতুনভাবে বাংলাদেশ গড়ার কাজে নিযুক্ত হতে চাই—সেটার পথ দেখাবে আমাদের এই সনদের বাস্তবায়ন কীভাবে হবে তা।”
তিনি আরও বলেন, “আমি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এবং কমিশনের সদস্য সবাইকে শুরুতেই ধন্যবাদ জানিয়ে রাখছি এই ঐতিহাসিক দিনটির সূত্রপাত করার জন্য, ঐতিহাসিক দিনটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য। তাদের এই দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল হিসেবে আজ আমরা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারব, সেটি নিয়ে আমরা আলাপ করব।”
সুপারিশমালা হস্তান্তরের সময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের সঙ্গে ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।
গত বছরের ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। দুই ধাপে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের মধ্যে প্রথম পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে দীর্ঘ সংলাপ, বৈঠক ও তর্কবিতর্কের পর জুলাই সনদ গ্রহণ করা হয়।
