চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের আচরণবিধি প্রকাশ করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ বিধি প্রকাশ হয়। এতে প্রার্থী, ভোটার ও কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য ১৭টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রার্থীদের এসব নির্দেশনা মানা বাধ্যতামূলক।
কমিশনের বিধিমালায় প্রার্থীদের মনোনয়ন নেওয়া, প্রচার, যানবাহন, শোভাযাত্রা, সভা এবং ভোটকেন্দ্রে প্রার্থী-ভোটারদের আচরণের ধরন উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন জানান, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থেই এ বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে। নির্বাচনের ফল ঘোষণা পর্যন্ত এটি কার্যকর থাকবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১২ অক্টোবর চাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। নির্বাচনের মোট খসড়া ভোটার ২৫ হাজার ৭৫২ জন। আগামী সোমবার ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপর ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভোটার তালিকা বিষয়ে আপত্তি জানানো যাবে। পরে ১১ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। তফসিল অনুযায়ী, ১৪ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র নেওয়া যাবে, ১৫ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর জমা দেওয়া যাবে। যাচাই-বাছাই শুরু হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ হবে, প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর।
বিধিমালা অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র নেওয়া কিংবা জমা দেওয়ার সময় প্রার্থী কোনো প্রকার মিছিল বা শোভাযাত্রা করতে পারবেন না। একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ পাঁচজন সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র নিতে বা জমা দিতে আসতে পারবেন। প্রার্থীকে ডোপ টেস্টও করাতে হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হলে প্রার্থীকে সশরীরে উপস্থিত হতে হবে।
প্রার্থীদের যানবাহন ব্যবহারেও শর্ত দেওয়া হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা, প্রত্যাহার বা নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো ধরনের যানবাহন, মোটরসাইকেল, রিকশা, ঘোড়ার গাড়ি, হাতি, ব্যান্ড পার্টি ব্যবহার করে শোভাযাত্রা বা মিছিল করা যাবে না। নির্বাচনের দিন ভোটারদের আনা-নেওয়ার জন্য কোনো যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না। তবে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় শুধু কমিশন থেকে অনুমোদিত স্টিকারযুক্ত যানবাহন নির্বাচনী এলাকায় চলতে পারবে।
প্রচার সীমাবদ্ধ করা হয়েছে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের দিন থেকে নির্বাচনের এক দিন আগে পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচার চালানো যাবে, তবে রাত ৯টার পর কোনো মাইক ব্যবহার করা যাবে না। প্রার্থী বা ভোটার ছাড়া অন্য কেউ কোনোভাবেই কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচারণা চালাতে পারবেন না।
নির্বাচনী প্রচারপত্রে, প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত আক্রমণ, চরিত্র হনন, গুজব, মানহানিকর আচরণ, অশালীন উক্তি, উসকানিমূলক বা অসত্য তথ্য ছড়ানো যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, এমন কোনো বক্তব্যও ব্যবহার করা যাবে না।
কোনো সভা, সমাবেশ, শোভাযাত্রা করতে চাইলে লিখিত অনুমতি নিতে হবে এবং প্রক্টরকে জানাতে হবে। অনুমতি নিতে হবে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে। প্রচারণায় প্রার্থীরা নিজের সাদাকালো ছবি ব্যবহার করতে পারবেন, তবে অন্য কারও ছবি বা প্রতীক ব্যবহার করা যাবে না। কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না।
প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কেউ কোনো গেট, তোরণ, ক্যাম্প বা আলোকসজ্জা করতে পারবেন না। তবে চাইলে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য প্যান্ডেল, শামিয়ানা কিংবা মঞ্চ অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা যাবে।
কোনো ধরনের চাঁদা, অনুদান, আর্থিক লেনদেন করা যাবে না। ভোটারদের পানীয়, খাদ্য, উপঢৌকন বা বকশিশ দেওয়া যাবে না। প্রচারণায় আক্রমণাত্মক বক্তব্য, গুজব বা উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া নিষিদ্ধ। লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে—এমন বক্তব্যও দেওয়া যাবে না।
নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট ও রিটার্নিং অফিসার থেকে অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। ভোট দেওয়ার পর ভোটারদের অবিলম্বে ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করতে হবে। ভোটকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে ভোটার রসিদ বিতরণ করা যাবে না।
গণমাধ্যমকর্মীরা প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার ইস্যু করা পরিচয়পত্র দেখিয়ে অনুমতি নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে ও ছবি তুলতে পারবেন, তবে বুথে প্রবেশ করতে পারবেন না।
আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার অথবা রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।