- নমুনা পরীক্ষার জন্য আইসিডিডিআরবিতে পাঠানো হয়েছে
নাটোর পৌরসভা থেকে সরবরাহকৃত পানি পান করে শতাধিক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নারী, পুরুষ ও শিশুসহ দুই দিনে শতাধিক বাসিন্দা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বুধবার দুপুর পর্যন্ত নাটোর সদর হাসপাতালে ১৪৭ জন ভর্তি আছেন বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুক্তাদির আরেফিন। এর মধ্যে পুরুষ ৬৬ জন, নারী ও শিশু ৮১ জন।
হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ নার্স সায়রা আফরোজ স্মৃতি জানান, অসুস্থরা সবাই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এবং তারা পৌর এলাকার ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। কাঠালবাড়িয়া, ঝাউতলা, বঙ্গজল ও পটুয়াপাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে এ সমস্যা ছড়িয়ে পড়েছে।
ঝাউতলার বাসিন্দা আজিজুল হক কালু বলেন, “এলাকার প্রায় লোক, ঘরে ঘরে অসুস্থ। একই সমস্যা, রাত থেকে ভর্তি আছে।”
উত্তর পটুয়ারপাড়ার আব্দুল জলিল ফকির জানান, “পানিডা খাওয়ার পরে পাতলা পায়খানা, বমি, পেটে মুচড়ানো ব্যথা আর হাত-পা অবশ হয়ে আসে। পৌরসভা যদি আগে পানির ট্যাংক পরীক্ষা করত, এই অবস্থা হতো না।”
পৌর এলাকার বঙ্গজলের লাকি রানী জানান, “মঙ্গলবার দুপুরে আমার শাশুড়ি অসুস্থ হন। বাসায় চিকিৎসা দিয়েও সেরে ওঠেননি, সকালে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। তিনি ট্যাপের জল খাওয়ার পর থেকেই বমি ও পাতলা পায়খানায় ভুগছেন।”
ঝাউতলা মোড়ের মোছা. তাসলিমা খাতুন বলেন, “আমাদের এলাকায় পানির ট্যাংকি আছে। সেখান থেকে পানি খাওয়ার পর থেকে শুধু আমি না, মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ সবাই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।”
খবর পেয়ে নাটোর জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসমা খাতুন এবং সিভিল সার্জন মুক্তাদির আরেফিন সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। তারা জানান, চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত স্যালাইন ও ওষুধ মজুত আছে। আক্রান্ত পানির নমুনা সংগ্রহ করে আইসিডিডিআরবিতে পাঠানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন মুক্তাদির আরেফিন বলেন, “ভর্তি রোগীদের মধ্যে ১৭ জনের অবস্থা গুরুতর। এজন্য একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। আইডিসিআর ও সিটিসিকে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে মেডিকেল টিম সরাসরি এলাকায় গিয়ে চিকিৎসা দেবে। পাশাপাশি পৌরসভার মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হবে।”
জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন বলেন, “রোগীদের সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে পানি থেকেই সংক্রমণ। সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো, অনেকে পানি ফুটিয়ে খাননি। পানির নমুনা বগুড়ায় পাঠানো হয়েছে, রিপোর্ট এলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। আপাতত স্যালাইন ও বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে।”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, একসঙ্গে এত রোগী আসায় চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত ওষুধ ও স্যালাইন সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে, প্রয়োজনে অন্য জায়গা থেকেও সংগ্রহ করা হবে।
অবস্থা পর্যবেক্ষণে জেলা প্রশাসন একটি মনিটরিং টিম গঠন করেছে।