রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিজেকে ‘ইমাম মাহাদি’ দাবি করা নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলা’র কবর, বাড়ি ও দরবার শরিফে তৌহিদী জনতার হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় নুরুল হকের কবর ভেঙে লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন দেবগ্রাম ইউনিয়নের যতু মিস্ত্রিপাড়ার আজাদ মোল্লার ছেলে রাসেল মোল্লা (২৮)। তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। জেলা সিভিল সার্জন এস এম মাসুদ জানান, আহতদের মধ্যে ২২ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, যাদের দুজন আশঙ্কাজনক।
নুরুল হক সম্প্রতি মারা গেলে তাকে মাটি থেকে উঁচু করে কাবা শরিফের আদলে তৈরি কবরস্থলে দাফন করা হয়। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। জুমার নামাজের পর পূর্বঘোষণা অনুযায়ী তৌহিদী জনতা শহীদ মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। এরপর দরবার শরিফে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
পুলিশ আগে থেকেই অবস্থান নিলেও বিপুল জনতার কারণে নিয়ন্ত্রণ হারায়। পরে সেনাবাহিনী ও র্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এর মধ্যেই দ্বিতীয় দফায় হামলাকারীরা নুরুল হকের কবর ভেঙে লাশ তুলে এনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মা মোড়ে পুড়িয়ে দেয়।
হামলাকারীদের একজন মো. আল আমিন বলেন, “নুরাল পাগল নিজেকে কখনো ইমাম মাহাদি, আবার কখনো খোদা দাবি করেছেন। তাঁর এসব কর্মকাণ্ড শরিয়তবিরোধী হওয়ায় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে দরবার ভেঙে দিয়েছে এবং লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলেছে।”
পুলিশ সুপার জানান, এ সময় হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের গাড়ি ভাঙচুর করে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
স্থানীয়রা জানান, আশির দশকে নিজেকে ‘ইমাম মাহাদি’ দাবি করে নুরুল হক এলাকা ছাড়লেও পরে ফিরে এসে অনুসারী গড়ে তোলেন। ২৩ আগস্ট ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। এরপর তাঁকে দরবার শরিফের ভেতর কবর দেওয়া হলে তৌহিদী জনতা কবর নিচু করা, রং পরিবর্তন ও সাইনবোর্ড অপসারণের দাবি জানায়। প্রশাসন দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করলেও শুক্রবার হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নুরুল হকের পরিবার ও ভক্তদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।