নেপালে টানা বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, অস্থিরতার মধ্যে সেনা মোতায়েন

টানা দুই দিন ধরে ‘জেন-জি’র বিক্ষোভ আর সহিংসতার মধ্যে পদত্যাগ করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। নেপালের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর তার পদত্যাগের খবর নিশ্চিত করেছে।

সোশাল মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে দুদিন আগে কাঠমান্ডুতে যে বিক্ষোভের সূচনা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত তা প্রধানমন্ত্রীর পতন ঘটাল। এর আগে মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীরা নেপালের পার্লামেন্ট ভবন ও একাধিক রাজনীতিকের বাড়িতে এবং দলীয় কার্যালয়ে আগুন দেয়। বিক্ষোভ ক্রমশ কাঠমান্ডু ও বড় বড় শহরের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছিল। রাজধানী তখন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

নিবন্ধনহীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপ বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ জেন-জি বিক্ষোভকারীরা সোমবার কাঠমান্ডুর রাস্তায় নামে। তারা দুর্নীতি এবং ব্যবস্থার সংকট নিয়েও প্রশ্ন তোলে। পরে বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিলে পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থীসহ ১৯ জন প্রাণ হারান। এর পরই আন্দোলন সরকারবিরোধী রূপ নেয়। বাধ্য হয়ে সরকার সোশাল মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ মূল দাবিতে পরিণত হয়। বিভিন্ন দল এমনকি ওলির মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যও এই দাবিতে সংহতি জানান।

নেপালি কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে গত বছরের জুলাইয়ে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন কমিউনিস্ট নেতা ওলি। এর আগে তিনি ২০১৫-১৬, ২০১৮-২১ এবং ২০২১ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দৃঢ়চেতা অবস্থান ও জাতীয়তাবাদী নীতির জন্য পরিচিত ওলি স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অস্থিরতা এবং কর্তৃত্ববাদী চর্চার অভিযোগ নিয়ে দায়িত্ব ছাড়তে হলো তাকে। যার দরুন দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের পর নেপালেও প্রবল গণবিক্ষোভে সরকার পতনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এদিকে নেপালজুড়ে চলমান বিক্ষোভের কারণে নিরাপত্তা উদ্বেগে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কোটেশ্বরের কাছে ধোঁয়া দেখা যাওয়ার পর স্থানীয় সময় বেলা পৌনে ১টার দিকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের উড্ডয়ন ও অবতরণ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে বিমানবন্দরে সেনা মোতায়েন করা হয়।

বিক্ষোভকারীরা একের পর এক মন্ত্রী ও রাজনীতিকের বাড়িতে আগুন ও ভাঙচুর শুরু করলে মঙ্গলবার দুপুর থেকে সেনাবাহিনী সব মন্ত্রী ও বড় বড় দলের শীর্ষ নেতাদের তাদের বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট থেকে হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নেয়। তাদেরকে অজ্ঞাত সেনাঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। একই দিনে জেন-জি বিক্ষোভকারীরা নেপালের সচিবালয় সিংহ দুর্বার প্রাঙ্গণেও ঢুকে পড়ে।

ওলির পথ ধরে প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পুডেলও পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। নেপালে রাষ্ট্রপতি সরকার প্রধান, আর প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী প্রধান। প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করলেই সরকারের পতন ঘটবে। তবে এরপর কে দায়িত্ব নেবে বা পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা এখনও অনিশ্চিত।

পরিস্থিতি শান্ত হওয়া এবং নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত সেনাবাহিনী দায়িত্বভার নেবে বলে নেপালজুড়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।