নেপালে সহিংস বিক্ষোভ: সেনা মোতায়েন, নিহত ২০-এর বেশি

কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিরতার সময় পার করছে হিমালয়ের দেশ নেপাল। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে জেন-জি প্রজন্মের দ্বিতীয় দিনের বিক্ষোভ অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও সহিংসতায় রূপ নেওয়ার পর কাঠমান্ডুর সড়কগুলোতে সেনা টহল জোরদার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেও বিক্ষোভকারীরা একের পর এক রাজনীতিকের ঘরে লুটপাট, ভাঙচুর চালান, সরকারি ভবন ও সংসদ ভবনে আগুন দেন। সোমবার শুরু হওয়া এ অস্থিরতায় এ পর্যন্ত ২০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে।

বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়া জেন-জি গোষ্ঠী দাবি করছে, ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে তারা যুক্ত নয়; ‘সুযোগসন্ধানীরা’ আন্দোলন দখল করেছে। বুধবার কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর পুনরায় চালু হলেও রাজধানীজুড়ে কারফিউ চলছে। অন্যদিকে, পুড়তে থাকা ভবন থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সহিংসতায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। তারা ২৭ জনকে গ্রেপ্তার ও ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে।

কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় সামরিক চেকপয়েন্ট বসানো হয়েছে। নিউ বানেশ্বর সড়কে যানবাহন থামিয়ে পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেনারা লাউডস্পিকারে মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিচ্ছে।

তবে কিছু তরুণকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে সৃষ্ট জঞ্জাল পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। ১৪ বছর বয়সী কেসাং লামা বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ পরিবর্তনের সূচনা করবে বলে তিনি আশা করেন। ২৪ বছর বয়সী পরশ প্রতাপ হামাল জানান, তিনি জঞ্জাল পরিষ্কারে নেমেছেন দূষণ কমানোর জন্য। তার মতে, দেশটির দরকার স্বাধীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগে দেশ নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ায় সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। ওলির সরকার নিবন্ধনহীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করলে তরুণরা বিক্ষোভে নামে। ওই দিনই ১৯ জন প্রাণ হারায়। পরে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও সহিংসতা কমেনি। মঙ্গলবার আরও তিনজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি সংঘাতে দুই পুলিশ সদস্যও প্রাণ হারান।

আগুনে আদালত ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নেপালের সুপ্রিম কোর্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য সব শুনানি স্থগিত করেছে। এদিকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে কাঠমান্ডুর আশপাশের জেল থেকে কয়েক হাজার কয়েদি পালিয়েছে। পশ্চিম নেপালের বাঙ্কে জেলার একটি কিশোর সংশোধনাগার থেকে পালানোর সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১৮ বছরের নিচে পাঁচ কিশোর নিহত হয়।

সামরিক বাহিনী জেন-জি নেতাদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে। ছাত্রনেতারা বর্তমানে তাদের দাবিনামা প্রস্তুত করছেন। বিক্ষোভকারীরা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের আন্দোলন অহিংস, শান্তিপূর্ণ ও নাগরিক অংশগ্রহণভিত্তিক। তারা পরিস্থিতি মোকাবেলা ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দৈনন্দিন জীবনযাপন ব্যাহত করা বা অন্য কারও হাতে আন্দোলন ব্যবহৃত হওয়ার উদ্দেশ্য তাদের ছিল না। সেনাবাহিনীও জানিয়েছে, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে জড়িত অরাজক গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে।

সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রাজারাম বাসনেট বলেন, “যারা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে, তাদের ধরতেই আমরা এখন মূলত কাজ করছি।”