সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিকের গাড়ি চুরির মামলার আসামি মোরশেদ মঞ্জুরকে হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের মামলায় টাঙ্গাইলের পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের পুলিশ পরিদর্শক আমিনুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আমিনুল ইসলাম ঘটনার সময় ঢাকার গুলশান থানায় পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার জামিন আবেদন নাকচ করে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া বৃহস্পতিবার তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বুধবার বিকেলে টাঙ্গাইল পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার থেকে আমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে মির্জাপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়। মির্জাপুর থানার এসআই রমিজ রায়হান তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
আমিনুল ইসলামের পক্ষে আইনজীবী আমিনুল গণি টিটো জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, “গুলশান থানার এসআই হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন মোরশেদ মঞ্জুর। অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনকে আসামি করা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে তার (আমিনুল ইসলাম) নাম আসে। অভিযোগে বলা হয়নি যে ভিকটিমকে তার রুমে এনে মারধর করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে ওসি মাজহারুল ইসলামের রুমেও নেওয়া হয়। কিন্তু থানার এসি বা ওসির বিরুদ্ধে প্রতিবেদনে কোনো অভিযোগ নাই। অভিযোগ এসেছে কেবল আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সর্বোচ্চ সাজা দুই বছর। যে কোনো শর্তে তার জামিনের আবেদন করছি।”
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, “এ আসামি জামিন পেলে মামলায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারেন।”
শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে আমিনুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল গণি টিটো।
বিদিশার গাড়ি চুরি মামলার আসামি মোরশেদ মঞ্জুর গত বছরের ২৭ জুন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে গুলশান থানার এসআই হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন। সেখানে ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনের ৪/৫/৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। গত ১০ মে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবির হোসেন আমিনুল ইসলাম এবং হাফিজুর রহমানকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। পরে হাফিজুর রহমান আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে আদালত তা নাকচ করে তাকেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়, মোরশেদ মঞ্জুর ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। পূর্ব পরিচিত বিদিশা সিদ্দিকার কাছ থেকে তিনি ৩৯ লাখ টাকায় একটি জাগুয়ার গাড়ি কেনেন। নাম পরিবর্তন বাবদ আরও এক লাখ ৯৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু বিদিশা ‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে’ গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে মামলা করেন।
গোয়েন্দা পুলিশ সেই মামলায় গত বছরের ২০ এপ্রিল সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ থেকে মোরশেদ মঞ্জুরকে গ্রেপ্তার করে গুলশান থানায় নিয়ে যায়। সেখানে গাড়ি উদ্ধারের নামে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হাফিজুর রহমান ‘গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন’ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তাকে কিল, ঘুষি ও লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় এবং ‘ক্রসফায়ারে হত্যা করার হুমকি’ দেওয়া হয় বলে মঞ্জুর অভিযোগ করেন।
মামলায় তিনি আরও উল্লেখ করেন, এক পর্যায়ে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে শারীরিক নির্যাতনের সময় ছবি ধারণ করে বিভিন্নজনকে পাঠানো হয়। মারধরের কথা কাউকে না বলতে তাকে হুমকি দেওয়া হয়। পরে ‘কালো রঙের একটি ইলেকট্রিক মেশিনের মাধ্যমে শক দিলে’ তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। নির্যাতনের কারণে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এবং দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন।