রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্রপ্রতিনিধি নির্বাচনে ডিজিটাল কারচুপি প্রতিরোধে হাতে ভোট গণনাসহ ছয়টি দাবি জানিয়েছে ছাত্রদল। বুধবার দুপুরে রাকসুর কোষাধ্যক্ষ কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দাবি–সংবলিত স্মারকলিপি দেন ছাত্রদল মনোনীত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের প্রার্থীরা।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের নেতারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেন। অন্যদিকে বেলা দেড়টার দিকে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে তাঁরা ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ছাত্রদলের দাবিগুলো হলো—
- ভোট গণনায় ম্যানুয়াল পদ্ধতি (হাতে গণনা) নিশ্চিত করা।
- ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার নিশ্চিত করা।
- ভুয়া ও জাল ভোট শনাক্তে বাধ্যতামূলক ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা।
- ভোট গ্রহণের সময় বৈধ কার্ড বা পাসধারী ব্যতীত কাউকে ভোটকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে ঢুকতে না দেওয়া এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা।
- লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় রাখতে অবৈধ কালো টাকার প্রভাব রুখতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।
- সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সব প্রার্থীর জন্য একই আচরণবিধি মানা হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা।
ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন (আবির) বলেন, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গণনা সময়সাপেক্ষ হলেও জনবল বাড়ালে সময় কমানো সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়ে যথেষ্ট জনবল রয়েছে। ম্যানুয়ালি ভোট গণনা না করলে ছাত্রদল ভোট বর্জন করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা পরিস্থিতিই বলে দেবে। আমরা চাই না ভোট বর্জন করতে। আমরা চাই, ভোট সঠিকভাবে হোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই দাবিগুলো শুধু ছাত্রদলের নয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলে আমরা এগুলো তুলেছি। আমরা সতর্ক করে বলতে চাই, আমাদের দাবিগুলো মেনে নিন। না হলে ছাত্রদল নয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরাই নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।’
নির্বাচন কমিশনে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের নেতারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করেন। ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল আলীম বলেন, ‘ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল। এই নির্বাচনটা যাতে গ্রহণযোগ্য হয়, সে জন্য আমরা কিছু পরামর্শ দিয়েছি।’
ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাইছিলাম নির্বাচনটা যেন পিছিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি, এটুকু কষ্ট আছে। নির্বাচনটা আরেকটু পিছিয়ে দিলে আরও সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হতো। ডাকসু ও জাকসুতে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তা যেন এখানে না ঘটে। ভোট বয়কটের পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সেই উদ্বেগ থেকে আমরা বারবার আসছি পরামর্শ দিতে।’
স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে হবে ভোট গ্রহণ
এদিকে নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মো. সেতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা কারও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নয়। আমাদের নিজের বিবেচনা থেকে আমরা এটা করেছি।’
ছাত্রদলের দাবির বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদল যেসব দাবি দিয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি দাবি ছাড়া বাকি দাবিগুলোর ব্যাপারে কমিশন ভেবে দেখবে। তবে এই যুগে হাতে ভোট গণনা অনেক দুরূহ ব্যাপার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা সেটি দেখেছেন। রাকসু নির্বাচন তাঁরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দেখতে চান, তাই বাকি পাঁচটি দাবি আন্তরিকভাবে বিবেচনা করা হবে।
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের নির্বাচন কমিশনে আসার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অংশ। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়, সে জন্যই তাঁরা পরামর্শ দিতে এসেছেন।