ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত দেশের রাজনৈতিক দলগুলোই নেবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান ‘কম হওয়াই ভালো’ বলে তিনি মনে করেন।
রোববার রাজধানীর ফার্মগেটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। সেখানে একটি বেসরকারি পরামর্শ প্রতিষ্ঠান নির্বাচনী জরিপের ফল প্রকাশ করে। ‘জনগণের নির্বাচন ভাবনা’ শীর্ষক এই জরিপের দ্বিতীয় দফার প্রথম পর্বের ফল প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে শফিকুল আলম বলেন, “পিআর নাকি বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে, এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোই নেবে। এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য কম হওয়া শ্রেয়।”
জরিপের ফলাফল উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষের ভোট দিতে চাওয়া মানে সামনে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হবে।”
চলতি মাসের ২ তারিখ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালিত হয়। এতে অংশ নেন ১০ হাজার ৪১৩ জন ভোটার।
জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে—২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটার। ভোট দিতে আগ্রহী ৯৪ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটার। তবে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নেই ৫৬ শতাংশ ভোটারের। প্রবীণ প্রজন্মের তুলনায় নবীনরা এ বিষয়ে বেশি সচেতন এবং তাদের মনোভাব অধিক ইতিবাচক।
জরিপের ফল আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াত সারোয়ার।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার: ভোটারদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যাগরিষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্মক্ষমতার প্রতি ইতিবাচক ধারণা প্রকাশ করেছেন। ৭৮ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা এটিকে ‘ভালো’ বা ‘মধ্যম’ হিসেবে দেখছেন। তবে তরুণ, শিক্ষিত ও শহুরে জনসংখ্যার মধ্যে সন্তুষ্টির হার তুলনামূলকভাবে কম।
ভোট চিন্তা: ৭৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটারের ধারণা, তারা নির্ভয়ে ও নিরাপদে ভোট দিতে পারবেন। তবে ভোটের সময় পুলিশ-প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রবীণ প্রজন্মের তুলনায় জেন-জি প্রজন্ম কম ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি: জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই মনে করেন, গত ৬ মাসে চাঁদাবাজি বেড়েছে। এ ধরনের উদ্বেগ শহুরে বাসিন্দা, তরুণ প্রজন্ম এবং উচ্চ শিক্ষা ও আয়ের স্তরের লোকেদের মধ্যে বেশি স্পষ্ট।
অন্তর্বর্তী সরকার: জরিপে ৭৮ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা অন্তর্বর্তী কর্মকাণ্ডকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করেছেন। তবে স্বল্পশিক্ষিতদের তুলনায় উচ্চশিক্ষিতরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে কম সন্তুষ্ট। অন্যদিকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলো অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতা নিয়ে তুলনামূলকভাবে কম ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন।