আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের দিন ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে স্নাইপার রাইফেল থেকে আন্দোলনকারীদের মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয় বলে দাবি করেছেন এক সাক্ষী।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে করা মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এ সাক্ষ্য দেন আলী আহসান জুনায়েদ। তিনি এ মামলার ৪৮তম সাক্ষী। বর্তমানে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক সংগঠন ‘ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ’ (আপ বাংলাদেশ)-এর প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়কও তিনি।
২০১৩ সালে কোটা আন্দোলনের সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন। ২০১৬ সালে পড়াশোনা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যান। সাক্ষ্যে তিনি ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের কোটা বিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা দেন।
আন্দোলন চলাকালে যাত্রাবাড়ী থেকে চিটাগাং রোড এলাকায় শতাধিক ব্যক্তি নিহত ও কয়েকশত আহত হন, এবং প্রায় ১৩৪ জনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে রায়ের বাজার কবরস্থানে দাফন করা হয় বলে জানান তিনি।
জুনায়েদ বলেন, ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন নাহিদ ইসলাম। সেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। পরদিন যাত্রাবাড়ী এলাকায় আন্দোলন চালিয়ে যান তারা। সেদিন পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে আন্দোলনকারীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহত হন।
তিনি আরও বলেন, “প্রথমে ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আমি সমন্বয়ক আসিফ ও সাদিক কায়েমের সঙ্গে কথা বলে কর্মসূচি এগিয়ে আনার পরামর্শ দেই। ৪ আগস্ট রাতে সমন্বয়ক আসিফ ‘মার্চ টু ঢাকা’ একদিন এগিয়ে ৫ আগস্ট করার ঘোষণা দেন।”
তার ভাষ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্ট সকাল ৯টার সময় বাসা থেকে বের হয়ে তিনি আন্দোলনে যোগ দিতে যাত্রাবাড়ীর দিকে রওনা হন; সঙ্গে ছিলেন আরও ৭ থেকে ৮ জন। সাদ্দাম মার্কেটের সামনে আন্দোলনকারীরা জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে কাজলা ফুটওভার ব্রিজের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। তখন আন্দোলনকারীদের উপর স্নাইপার রাইফেল দিয়ে মাথায় লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। তিনি বলেন, “আমি প্রায় ১৫ জনকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অনাবিল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে দেখেছি।”
সেদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী থানার আশপাশ থেকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায় বলে জানান জুনায়েদ। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য তিনি শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জড়িত সদস্যদের বিচার দাবি করেন।
বিকালে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে তাকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের জন্য রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। জেরা শেষ না হওয়ায় সোমবারও তাকে জেরা করা হবে।
রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্য দেন তিনি। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনালের অপর দুই বিচারক ছিলেন মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।