এশিয়া কাপ: ভারতকে ৪১ রানে হেরে বাংলাদেশের লড়াই থেমে গেল সুপার ফোরে

এক পাশে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে দলকে লড়াইয়ে রাখছিলেন সাইফ হাসান, অন্যপাশে একের পর এক ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত সুযোগের মৃত্যু ঘটছিল। আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক সাইফ এবারও লড়লেন বুক চিতিয়ে, কিন্তু সঙ্গী পেলেন না একজনও। দুর্দান্ত বোলিং ও ফিল্ডিং করেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় বড় ব্যবধানেই হেরে গেল বাংলাদেশ।

এশিয়া কাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভারত রানে বাংলাদেশকে হারিয়ে সুপার ফোরে টানা দুই জয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেছে। ভারতের জয়ের ফলে শ্রীলঙ্কা টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে। বাংলাদেশ বৃহস্পতিবার মুখোমুখি হবে পাকিস্তানের সঙ্গে, যা কার্যত সেমি-ফাইনাল।

দুবাইয়ে বুধবার চোটের কারণে খেলতে পারেননি অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। টানা দুই দিনের খেলার কারণে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচকেই প্রধান ধরে মোট চারটি পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। নেতৃত্বের অভিষেকে টস জিতে বোলিং নেওয়া হয় জাকের আলির হাতে।

ভারতের ইনিংসে দুটি অধ্যায় দেখা যায়। আভিশেক শার্মার বিধ্বংসী ব্যাটিংতে প্রথম ১১ ওভারে ১১২ রান তোলে ভারত। ৩৭ বল খেলে ৬ চার ও ৫ ছক্কায় ৭৫ রান করেন আভিশেক। তবে শেষ ৯ ওভারে ভারত যোগ করতে পারে মাত্র ৫৬ রান।

বাংলাদেশের বোলারদের দারুণভাবে লড়াই করার চেষ্টা সাইফ ছাড়া অন্য কেউ সফল করতে পারেনি। ১৬৯ রানের টার্গেটে বাংলাদেশ শেষ হয় ১২৭ রানে। আগের ম্যাচে ৬১ রান করা সাইফ এবার ৫ ছক্কায় ৫১ বলে ৬৯ রান করেন। তিনি ও পারভেজ হোসেন ইমন (২১) ছাড়া কোনো ব্যাটসম্যান দু অঙ্ক স্পর্শ করতে পারেননি।

ভারতের পাওয়ার প্লেতে দুই অংশে ভাগ দেখা যায়। প্রথম তিন ওভারে আসে মাত্র একটি বাউন্ডারি ও ১৭ রান। পরের তিন ওভারে আসে ৫৫ রান। নাসুম আহমেদের বলে শুবমান গিলের চার ও ছক্কা দিয়ে আগ্রাসন শুরু। বাঁহাতি ওপেনার আভিশেকও ছক্কা মারেন পরের ওভারে। প্রথম ১১ ওভারে ১১২ রান তোলার পর পরবর্তী ৯ ওভারে ভারতের রান ৫৬।

পাওয়ার প্লের শেষে রিশাদ হোসেনকে বাউন্ডারিতে স্বাগত জানান গিল। তবে ওই ওভারেই তাকে (১৯ বলে ২৯) ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক থ্রু দেন রিশাদ। পরের ওভারে তিনি ফিরিয়ে দেন শিভম দুবেকে (৩ বলে ২)। অন্য প্রান্ত থেকে সাইফ হাসান দুই ওভারে মাত্র ৭ রান দেন।

রিশাদের অসাধারণ ফিল্ডিং ও দুর্দান্ত থ্রোতে রান আউট হন অভিশেক। মুস্তাফিজের ওভারেই উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ। প্রথম স্পেলে দারুণ বোলিং করেও উইকেটশূন্য থাকা তানজিম হাসান দ্বিতীয় স্পেলে তিলাক ভার্মাকে বিদায় দেন।

ভারতের ডানহাতি-বাঁহাতি ভারসাম্য বজায় রাখতে স্যামসন না নামিয়ে ক্রিজে পাঠানো হয় আকসার প্যাটেলকে। শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে হার্দিক পান্ডিয়া ও আকসার বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখে। শেষ পাঁচ ওভারে ভারত যোগ করতে পারে মাত্র ৩৬ রান, মূলত পান্ডিয়ার ব্যাটে।

বাংলাদেশের শুরুতে জাসপ্রিত বুমরাহ উইকেট এনে দেন তানজিদ হাসানকে (১)। পারভেজ হোসেন ইমন প্রথম রানের দেখা পান অষ্টম বলে। এরপর দুজন মিলে মারেন চারটি বাউন্ডারি। তবে ৪২ রানের এই জুটি ভাঙার পর আর কোনো ভালো জুটি গড়ে উঠতে পারে না।

সাইফ হাসান একপাশ থেকে লড়াই চালিয়ে যান। চারটি ছক্কা মারেন তিন আকসারকে, একটি ভারুনকে। ৩৬ বলে ফিফটি করেন। শেষ পর্যন্ত আকসারের দারুণ ক্যাচে থামে ৬৯ রানে, নিশ্চিত হয় দলের বড় হার।

স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৬৮/৬ (আভিশেক ৭৫, গিল ২৯, দুবে ২, সুরিয়াকুমার ৫, পান্ডিয়া ৩৮, তিলাক ৫, আকসার ১০*; তানজিম ৪-০-২৯-১, নাসুম ৪-০-৩৪-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৩৩-১, সাইফ উদ্দিন ৩-০-৩৭-১, রিশাদ ৩-০-২৭-২, সাইফ হাসান ২-০-৭-০)।

বাংলাদেশ: ১৯.৩ ওভারে ১২৭ (সাইফ হাসান ৬৯, তানজিদ ১, পারভেজ ২১, হৃদয় ৭, শামীম ০, জাকের ৪, সাইফ উদ্দিন ৪, রিশাদ ২, তানজিম ০, নাসুম ৪*, মুস্তাফিজ ৬; পান্ডিয়া ২-০-১৪-০, বুমরাহ ৪-০-১৮-২, ভারুন ৪-০-২৯-২, কুলদিপ ৪-০-১৮-৩, আকসার ৪-০-৩৭-১, দুবে ১-০-১০-০, তিলাক ০.৩-০-১-১)।

ফলাফল: ভারত ৪১ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: আভিশেক শার্মা।