ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে অনিয়মের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, একই ধরনের অনিয়ম হলে জাতীয় নির্বাচনও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।
শুক্রবার বিকালে ঢাকার মিরপুরে বিএনপি নেতা কাজী আসাদুজ্জামানের স্মরণসভায় বক্তৃতা দেন রিজভী। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের ব্যালট পেপার নীলক্ষেতে ছাপানোসহ নানা অনিয়মের খবর প্রকাশিত হয়েছে। “এগুলো উপাচার্য কীভাবে চাপা দেবেন?” প্রশ্ন রাখেন তিনি।
ডাকসু-জাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ
গত ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু ও হল সংসদের ভোট অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ভোটে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্রশিবিরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তবে কোনো পদে তারা জয়ী হয়নি। সম্পাদকীয় বোর্ডের তিনটি পদ শিবিরের হাতছাড়া হয় এবং সেখানে বিজয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
ভোটের ১৩ দিন পর ছাত্রদল অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে ১১টি অনিয়মের অভিযোগ তোলে। অন্যদিকে, ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জাকসু ও হল সংসদের নির্বাচনে ভোট শুরু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে ছাত্রদলের প্যানেলসহ কয়েকটি প্যানেল ভোট বর্জন করে।
জামায়াতে ইসলামীর নেতারা মন্তব্য করেছেন, ডাকসু-জাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের বড় বিজয় জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচনে অনিয়মের আশঙ্কা
রিজভী বলেন, “এরকম অনিয়মের প্রক্রিয়া যদি চলতে থাকে, আগামী জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। নানা কায়দা-কানুন করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনো ফলাফল করা হবে কি না—এই নিয়ে জনগণের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “১৬ বছর কেউ ভোট দিতে পারেনি, ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেনি, দিনের ভোট রাত্রে হয়েছে, ভোটারবিহীন ভোট হয়েছে। আমরা আর ‘মামুদের’ ভোট হয়েছে ২৪ সালে। এই সমস্ত অনাচার বাধ সুষ্ঠু নির্বাচনকে মাটির তলায় কবর দিয়ে শেখ হাসিনা তার রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছিলেন।”
তার ভাষ্য, “যদি শেখ হাসিনার পথ অনুসরণ করে কাউকে কাউকে জিতিয়ে দেওয়ার কোনো নীলনকশা থাকে, তবে তা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক হবে। জনগণ ছেড়ে দেবে না।”
রিজভীর অভিযোগ
ডাকসুর সাবেক ভিপি রিজভী বলেন, “আমরা বলেছিলাম যে ডাকসু নির্বাচন যে প্রক্রিয়ায় হয়েছে, সেটা যথার্থ হয়নি। অনেক অনিয়মের খোঁজখবর আমরা পেয়েছি। ব্যালট পেপার, ব্যালট বইয়ে কোনো নম্বর ছিল না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসুতেও একই ঘটনা।”
তার অভিযোগ, “একজন ভোটারকে সকালবেলায় হাতে নিচে সই করিয়ে ভোটার বানানো হয়েছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এগুলো আমলে নেয়নি। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোও পাত্তা দেয়নি।”
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, “প্রতিদিন আমরা অনিয়মের চিত্র দেখতে পাচ্ছি। ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে নীলক্ষেতে—এমন খবর সংবাদপত্রে ও গণমাধ্যমে এসেছে। এটাকে চাপা দেবেন কী করে ভাইস চ্যান্সেলর সাহেব?”
তিনি বলেন, “ডাকসু নির্বাচন হওয়া নিয়ে আমাদের কোনো বিতর্ক নেই। কিন্তু যে পদ্ধতিতে হয়েছে, সেটার বিরোধিতা করছি। মাঠ সমতল রাখা ছাড়া নির্বাচন করা উচিত নয়। অথচ উপাচার্য অসমতল মাঠে নির্বাচন করে সাধারণ ছাত্রদের প্রতারিত করেছেন। এখন প্রমাণিত হলো, নীলক্ষেত থেকে পেপার ছাপানো হয়েছে। কোনো বিশেষ মহল বা রাজনৈতিক সংগঠনের উদ্দেশ্য পূরণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একগুয়েমিভাবে এই নির্বাচন করেছে।”
স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। তিনি কাজী আসাদুজ্জামানের বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্মের নানা দিক তুলে ধরেন।