পূজায় হামলার বিচার কি হচ্ছে, সেটাই প্রধান উদ্বেগ: পূজা উদযাপন পরিষদ

বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে উদযাপন নিশ্চিত করতে প্রশাসনের বিভিন্ন পদক্ষেপে আশ্বস্ত হলেও, পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, তাদের প্রধান উদ্বেগ দুর্বৃত্তদের হামলার বিচার হচ্ছে কি না।

দুর্গাপূজা শুরুর আগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় নেতৃবৃন্দের ভাষ্য, দুর্বৃত্তরা হামলা করতে পারে, কিন্তু ঘটনা ঘটার পর তারা ধরা পড়ছে কি না এবং বিচার হচ্ছে কি না—সেটিই তাদের মূল বিবেচ্য বিষয়।

শুক্রবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরা হয়। নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেন, দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে উদযাপিত হবে। তারা সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ঢাকায় অন্তত রাত ১১টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর দাবি জানান।

দেশের বিভিন্ন জেলার ৭ শতাধিক মণ্ডপকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট। অন্যদিকে, নাগরিক সমাজের নবগঠিত প্ল্যাটফর্ম ‘সম্প্রীতি যাত্রা’ ২৯ জেলাকে ঝুঁকিপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে পূজা শুরুর আগেই ১৩টি জেলায় প্রতিমা ভাঙচুর ও মন্দিরে হামলার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো: কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নেত্রকোণা, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, জামালপুর, নাটোর, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, “ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে হামলা করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা ২০০৯-১০ সাল থেকে চলছে। সর্বশেষ গঙ্গাচড়ার ঘটনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে। তারা কঠোর অবস্থানে থাকবে এবং আশ্বস্ত করেছেন। কিছু এলাকায় প্রতিমা ও মন্দিরে হামলার পরে দুর্বৃত্তরা ধরা পড়েছে, সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে এবং প্রশাসনের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য—হামলা দুর্বৃত্তরা করুক, কিন্তু তার বিচার হচ্ছে কি না, সেটাই দেখার বিষয়।”

পরিষদের উপদেষ্টা সুব্রত চৌধুরী বলেন, “নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন অতিরিক্ত কিছু না করে। সাধারণ মানুষ, যারা পরিবার নিয়ে মণ্ডপে যান, তাদের মধ্যে যেন ভয় সৃষ্টি না হয়। নতুন সংস্কৃতির মাধ্যমে যেখানে ঘটনা ঘটবে সেখানকার সব ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা এবং বিচারে সোপর্দ করা হবে।”

তিনি আরও বলেন, গত ৫৪ বছরে যে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সেনাবাহিনী তাদের নির্ধারিত এলাকার সকল পূজা মণ্ডপে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে। সুব্রত প্রত্যাশা করেন, “এবার পূজায় সারা দেশের ১৮ কোটি মানুষ আনন্দের সঙ্গে অংশগ্রহণ করবে। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার—এই শ্লোগান সকলকে ঐক্যবদ্ধ রাখবে।”

বুধবার মহালয়ার মাধ্যমে এবারের দুর্গোৎসবের প্রথম আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। হিন্দু আচার অনুযায়ী মহালয়া, বোধন ও সন্ধিপূজা—মিলে দুর্গোৎসব সম্পূর্ণ হয়। পঞ্জিকা অনুযায়ী, মহালয়ার সপ্তম দিন অর্থাৎ ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে পাঁচ দিনের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর মহাসপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর মহাষ্টমী, ১ অক্টোবর মহানবমী এবং ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর সন্ধ্যায় বিসর্জনের মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হবে।

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব লিখিত বক্তব্যে জানান, ঢাকায় এবার ২৫৯টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে, যা গতবারের তুলনায় ৭টি বেশি। সারাদেশে মোট মণ্ডপের সংখ্যা ৩৩,৩৫৫টি, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১,৮৯৪টি বেশি।

জয়ন্ত কুমার দেব আরও বলেন, “আমরা এমন সমাজ চাই যেখানে ঈদ, পূজা, বড়দিন, বুদ্ধ পূর্ণিমাসহ অন্যান্য ধর্মীয় ও সার্বজনীন সামাজিক অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে, অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে, কোনো ভয়ভীতি এবং পুলিশি পাহারা ছাড়া অনুষ্ঠিত হবে।” তিনি সারাদেশের পূজা মণ্ডপ ও কমিটিগুলোর জন্য ২২ দফা নির্দেশনা তুলে ধরেন এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষায় আট দফা দাবির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

দেবীর আগমন হবে গজে অর্থাৎ হাতির পিঠে চড়ে। দশমীতে দেবী মর্ত্যলোক ত্যাগ করবেন দোলায় চড়ে, যা মহামারী বা মড়কের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হয়।