দেশে সব জায়গায় ঘাটতি, রাষ্ট্র সঠিকভাবে চলছে না: জেড আই খান পান্না

দেশের সব জায়গায় ঘাটতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তিনি বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সঠিকভাবে চলছে না।

রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। এদিন ট্রাইব্যুনাল-১-এ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে একটি মামলা ছিল। ইনুর আইনজীবী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে আসেন জেড আই খান পান্না।

ইনুর মামলার বিচারকাজ শেষে চলে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে জেড আই খান পান্না বলেন, দেশের সব জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। এখান (ট্রাইব্যুনাল) থেকে তিনি নিরাপদে বাসায় যেতে পারবেন কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বাসায় ঘুমাতে পারবেন, সেটারও নিশ্চয়তা নেই।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গত ২৮ আগস্ট মঞ্চ ৭১ থেকে তিনি একটি গোলটেবিল বৈঠক ডেকেছিলেন। ইস্যু ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদাহানি রোধ ও ১৯৭২ সালের সংবিধানের সংরক্ষণ। অতিথিদের অধিকাংশের বয়স ছিল ৭০ বছরের ওপরে, দু–তিনজন ছিলেন ৬০ বছরের ওপরে। সেখানে হামলা চালানো হয়, ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়, কিন্তু হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। এ পরিস্থিতিতে আইন ও প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা কোথা থেকে আসবে—সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

এক সাংবাদিক জানতে চান, তিনি কি বলতে চান রাষ্ট্রযন্ত্র এখন সঠিকভাবে চলছে না? জবাবে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘সঠিকভাবে না, বেঠিকভাবে চলছে। উল্টাভাবে চলছে।’

ট্রাইব্যুনালের বিচারব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের কি বাইরে এটা? এটা কি বাংলাদেশের বাইরে?’

ক্ষমতাসীনরা টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতেই তাই। হত্যাযজ্ঞে অপরাধীর অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। তবে সেটা প্রমাণ সাপেক্ষে হতে হবে, গায়ের জোরে নয়। ব্যক্তিগতভাবে তিনি হত্যা ও মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে বলেও মত দেন। তিনি বলেন, এ কারণেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি কখনো ট্রাইব্যুনালে আসেননি। তার মতে, ফাঁসির সাজা দেওয়া মানবিকতার পরিপন্থী, যা এখনো আমেরিকার মতো ‘অসভ্য ও বর্বর দেশে’ চালু আছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২–এ হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। সেদিনই ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেয়। একই অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল-১–এ একটি বিবিধ মামলা ছিল, যা আজ প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খারিজ হয়ে যায়।

চলে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের জেড আই খান পান্না বলেন, ইনুর বিরুদ্ধে মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনাল-২–এ এবং সেটি আমলেও নেওয়া হয়েছে। যেহেতু মামলাটি ইতিমধ্যে ট্রাইব্যুনাল-২–এ স্থানান্তর হয়েছে, সে কারণে ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর একটি অডিও কলের কথোপকথন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে জেড আই খান পান্না বলেন, ওই কথোপকথনে ইনুকে গ্রেপ্তার করে একদিন রেখে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এ–ও বলা হয়েছিল যেন গুলি না চালানো হয়, কেবল সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে ভয় দেখানো হয়। তার মতে, এর মানে এই নয় যে ইনু হত্যার জন্য উসকানি দিয়েছেন।