চট্টগ্রামের বায়েজিদে সন্ত্রাসীদের গুলি, শ্রমিক মারধর করে নির্মাণ কাজ বন্ধ

চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায় চাঁদার দাবিতে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে ফাঁকা গুলি চালিয়ে এবং শ্রমিকদের মারধর করে ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। শনিবার সকালে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার উত্তরা হাউজিং সোসাইটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে জমির মালিকদের একজন থানায় মামলা করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, যারা চাঁদা দাবি করেছেন, তারা কয়েক মাস আগে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের সহযোগী ইমনের অনুসারী বলে পরিচয় দিয়েছেন। জমির মালিক জহিরুল ইসলাম জানান, ১৫ দিন আগে অটোরিকশা নিয়ে এসে কিছু সন্ত্রাসী ফাঁকা গুলি ছুড়ে শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রাখতে বলেছিল। এরপর ইমন পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন করে নির্মাণ সামগ্রী কেনার প্রস্তাব দেন। তিনি জানালে যে সামগ্রী কেনা হয়ে গেছে, তখন ওই ব্যক্তি ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন।

জহিরুল আরও বলেন, শনিবার সকালে একদল সন্ত্রাসী এসে ফাঁকা গুলি চালায় এবং শ্রমিকদের মারধর করে। পরে রাতেও তারা শ্রমিকদের সাইট ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দেয়। আতঙ্কে শ্রমিকরা চলে যাওয়ায় দুই দিন ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। নির্মাণাধীন ভবনের সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, ১০-১২ জন যুবক চট্টগ্রামের ভাষায় গালিগালাজ করে শ্রমিকদের বের হয়ে যেতে বলছে। তাদের সঙ্গে থাকা কালো প্যান্ট, টি-শার্ট, মাথায় কালো টুপি ও মাস্ক পরিহিত একজন হাতে থাকা পিস্তল উঁচিয়ে ফাঁকা গুলি চালাচ্ছেন।

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, সন্ত্রাসীরা শ্রমিকদের মারধর করছে এবং তাদের একজনকে বলতে শোনা যায়, “সাজ্জাদ ভাই ও ইমন ভাইয়ের সাথে কথা বলবি।” এ সময় একজনকে তেল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার কথা বলতে শোনা যায় এবং কয়েকজনকে তেল জাতীয় কিছু ছিটাতে দেখা যায়। প্রায় সবার মুখেই মাস্ক ছিল।

মামলায় জহিরুল উল্লেখ করেন, অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কের উত্তরা হাউজিং এলাকার ৩ নম্বর প্লটে গতবছর তারা ২৪ জন মিলে ছয় কাটা জমি কেনেন। চলতি মাসের ৫ তারিখ থেকে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কাজ শুরু করার পর থেকেই সোহেল ও হাসান নামে দুই ব্যক্তি প্রকৌশলীর মোবাইলে ফোন করে গালমন্দ ও হুমকি দেয় এবং মালিকদের তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। যোগাযোগ না করায় ১০-১২ দিন আগে পাঁচ যুবক শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। শনিবার সন্ত্রাসীরা আবারও গিয়ে শ্রমিকদের থাকার ঘরে ভাঙচুর করে মোবাইল নিয়ে যায়, স্টোর রুম ও পাইলিং মেশিন ভাঙচুর করে আগুন দেয়।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান জানান, “আমরা সিসিটিভি ভিডিও সংগ্রহ করেছি। সন্ত্রাসীরা মাস্ক পড়া ছিল। তাদের পরিচয় শনাক্তে কাজ করছি।”

সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ অপরাধ ইতিহাস রয়েছে। দুই যুগ আগে শাহ আমানত সেতুর সংযোগ সড়কে দিনের বেলায় আড়াআড়ি বাস রেখে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাইক্রোবাস আটকে গুলি চালিয়ে আটজনকে হত্যার আসামি ছিলেন তিনি। তার অনুসারীরা বায়েজিদ ও চান্দগাঁও এলাকায় চাঁদাবাজি চালায়। বর্তমানে গ্রেপ্তার সাজ্জাদের হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে তার সহযোগী ইমন।

গত বছরের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়া এলাকায় দোকানে বসে চা খাওয়ার সময় তাহসিন নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায়ও সাজ্জাদের নাম আসে। এরপর ৪ ডিসেম্বর রাতে বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন এলাকায় পুলিশের অভিযানে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায় সাজ্জাদ, তার গুলিতে দুই সাধারণ মানুষ আহত হন।

এ বছর ২৮ জানুয়ারি ফেইসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ থানার তৎকালীন ওসি আরিফ হোসেনকে প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকি দেয় সাজ্জাদ। এরপর পুলিশ কমিশনার তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেন। ১৫ মার্চ ঢাকার বসুন্ধরা শপিং সিটি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তবে এরপরও এলাকায় সহিংসতা থামেনি। ৩০ এপ্রিল ভোরে নগরীর চকবাজার চন্দনপুরা এলাকায় প্রাইভেটকারে ধাওয়া করে গুলি চালিয়ে বখতেয়ার হোসেন মানিক ও মো. আব্দুল্লাহ নামে দুইজনকে খুন করা হয়। ওই ঘটনায় নিহতদের একজনের মায়ের দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়, ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীর পরিকল্পনায় এ জোড়া খুন সংঘটিত হয়।