ব্যয় প্রস্তাব পাসে ব্যর্থতায় যুক্তরাষ্ট্রের শাটডাউন দীর্ঘায়িত

মার্কিন ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সচল করতে চতুর্থবারের মতো ব্যয় সংক্রান্ত প্রস্তাব পাসে সেনেটরদের ব্যর্থতায় চলমান শাটডাউন দীর্ঘায়িত হয়ে পরবর্তী সপ্তাহে গড়াচ্ছে।

সর্বশেষ ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের আরও দুটি প্রস্তাব উচ্চকক্ষের ৬০ ভোটের বাধা অতিক্রম করতে না পারায় শাটডাউনের অবসানে কতদিন লাগবে তা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

দুই পক্ষই নাছোড় অবস্থানে থাকায় হোয়াইট হাউস শুক্রবার বলেছে, শাটডাউন অব্যাহত থাকলে জরুরি সরকারি পরিষেবা চালু রাখতে তাদেরকে ‘অপ্রিয় কাজ’ ব্যাপক ছাঁটাইয়ের পথেই হাঁটতে হবে। আদৌ এই ব্যাপক ছাঁটাইয়ের সুযোগ আছে কিনা তা স্পষ্ট না হলেও হোয়াইট হাউস এরই মধ্যে বাজেট ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক দপ্তর ওএমবির সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলা শুরু করেছে।

রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাদের মধ্যে বিরোধ আটকে আছে এক জায়গায়, সেটি হলো—স্বাস্থ্যসেবা। ডেমোক্র্যাটরা চাইছে, অচলাবস্থাকে কাজে লাগিয়ে নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা ভর্তুকি যেন চালু থাকে তা নিশ্চিত করতে এবং মেডিকেইড স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে ট্রাম্প প্রশাসনের কাটছাঁট উল্টে দিতে। অন্যদিকে রিপাবলিকানদের অভিযোগ, কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতেই ডেমোক্র্যাটরা মার্কিন সরকারের কর্মকাণ্ড বন্ধ করে রেখেছে। তবে ডেমোক্র্যাটরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

সর্বশেষ সরকারের ব্যয় নিয়ে রিপাবলিকানদের আনা প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেন ৫৪ সেনেটর, বিপক্ষে পড়ে ৪৪ জনের ভোট। দুইজন ভোট দেননি। ডেমোক্র্যাটদের আনা পৃথক প্রস্তাবের পক্ষে পড়ে ৪৫ ভোট, বিপক্ষে ৫২।

শাটডাউনের জন্য শুরু থেকেই রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা একে অপরকে দোষারোপ করে আসছেন। দুই পক্ষের আলোচনায় অগ্রগতির কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।

“আমরা ভোটের পর ভোট দিয়ে যেতে পারি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটা নির্ভর করছে ৫ জনের ওপর,” এমনটাই বলেছেন মিসৌরির রিপাবলিকান সেনেটর জশ হলে।

হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট অভিযোগ করে বলেন, নিজেদের দাবি নিয়ে আমেরিকানদের জিম্মি করে রেখেছে ডেমোক্র্যাটরা। “শাটডাউনের অর্থনৈতিক প্রভাব প্রতিদিনই বাড়ছে,” উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি দেড় হাজার ডলার করে কমতে পারে।

হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা আগেও সতর্ক করেছিলেন, শাটডাউন অব্যাহত থাকলে তারা ফেডারেল কর্মীদের ছাঁটাই করার পথেই হাঁটবেন। ট্রাম্পও আগেই জানিয়েছিলেন, ‘অনেক ডেমোক্র্যাট সংস্থার মধ্যে কোন কোনগুলো ছেঁটে ফেলা যায়’ তা খতিয়ে দেখতে ওএমবির প্রধান রাসেল ভটের সঙ্গে বসবেন।

শাটডাউনের পাল্টায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে শুক্রবার ভট শিকাগোর জন্য বরাদ্দ কেন্দ্রীয় অবকাঠামো তহবিলের ২১০ কোটি ডলার ছাড় স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন। এর আগে হোয়াইট হাউস নিউ ইয়র্ক শহরের অবকাঠামো এবং ডেমোক্র্যাট পরিচালিত রাজ্যগুলোতে জ্বালানি প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ মোট দুই হাজার ৬০০ কোটি ডলার আটকে দেয়।

সেনেটে সংখ্যালঘু অংশের নেতা চাক শুমার বলেছেন, “ডেমোক্র্যাটরা স্বাস্থ্যসেবা ইস্যু নিয়ে লড়ছে, কারণ আমরা জানি আমেরিকানরা এটিই চান। আমরা জানি, আমাদের অনেক রিপাবলিকান সহকর্মীও এটা চান। এ পদক্ষেপ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে তা যে সর্বনাশা হবে তা রিপাবলিকানরা জানেন।”

কানেটিকাটের সেনেটর রিচার্ড ব্লুম্যানথল ও পেনসিলভানিয়ার জন ফেটারম্যানের মতো অনেকে ডেমোক্র্যাট অচলাবস্থা নিরসন নিয়ে প্রস্তাব সরাসরি প্রেসিডেন্টের মুখ থেকে শুনতে চান। তাদের মতে, এর আগে এমন পরিস্থিতিতে রিপাবলিকানদের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পরও প্রেসিডেন্টকে বেঁকে বসতে দেখা গিয়েছিল; যে কারণে তারা এখন সরাসরি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দরকষাকষিতে নামতে চান।

শাটডাউন নিয়ে মার্কিনিরাও মোটাদাগে দ্বিধাবিভক্ত। বুধবার প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৪৭% মার্কিন প্রাপ্তবয়স্ক শাটডাউনের জন্য রিপাবলিকানদের দোষারোপ করছেন। ডেমোক্র্যাটদের দোষ দেখছেন ৩০%। আর কার দোষ সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন ২৩%।