চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (চাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুললেও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জানিয়েছে, তারা ভোট বর্জন করবে না।
বুধবার রাতে ভোট শেষের প্রায় তিন ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে চবি ছাত্রদল নেতারা এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। তাদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করেছে। অভিযোগ জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, বরং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ‘দেখছি’ বলেই দায় এড়িয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার আশ্বস্ত করেছিলেন যে চাকসুর নির্বাচন হবে অনন্য উদাহরণ। কিন্তু বাস্তবে প্রতিটি ধাপে অনিয়ম ও কারচুপি হয়েছে, অথচ নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন নির্বিকার ছিল।
ভোটকেন্দ্রে প্রচারণা ও ‘স্লিপ বিতরণ’
এজিএস প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিক অভিযোগ করেন, একাধিক কেন্দ্রে নির্দিষ্ট প্রার্থীরা ভোটের সময়েও প্রচারণা চালিয়েছেন এবং ভোটারদের হাতে ভোটের স্লিপ বিতরণ করেছেন। এমনকি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেও এসব অনিয়ম ঘটে, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ভোটের পর অনেক ভোটারের হাতে অমোচনীয় কালি মুছে গেছে, ফলে একাধিকবার ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সইবিহীন ব্যালট ও এলইডি স্ক্রিন বন্ধ
বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে সইবিহীন ব্যালট পেপার পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ করেন ছাত্রদল নেতারা। একাধিক ভোটকর্মী বিষয়টি ‘ভুলবশত’ ঘটেছে বলে স্বীকার করেন। এ বিষয়ে তৌফিক বলেন, এত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে এমন ‘ভুল’ অদক্ষতা নয়, ইচ্ছাকৃত অনিয়মও হতে পারে।
এছাড়া ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিটি ভবনে স্থাপন করা এলইডি স্ক্রিন সারাদিনে একাধিকবার বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট স্ক্রিন বন্ধ থাকলেও কারণ জানানো হয়নি। পরে নির্বাচন কমিশন জানায়, কেউ তার কেটে দিয়েছে। তৌফিক প্রশ্ন তোলেন, “যেখানে পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন ছিল, সেখানে কীভাবে কেউ তার কেটে দিতে পারে?”
সহিংসতা ও ‘বহিরাগতদের উপস্থিতি’
বিকেল নাগাদ নতুন কলা ভবনের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রদল অভিযোগ করে, তাদের সমর্থকদের ওপর বহিরাগতরা লাঠি ও ইট নিয়ে হামলার চেষ্টা করেছে। তৌফিক বলেন, “আমরা দেখেছি চেনা শিক্ষার্থী নয়—বাইরের লোকজন কেন্দ্রের দিকে দৌড়ে আসছে।”
বিবিএ, সমাজবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ ও বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে অচেনা ব্যক্তিদের ভোটারদের ঘিরে ধরে স্লিপ ধরিয়ে দেওয়ার এবং প্রভাব খাটানোর অভিযোগও তোলেন তিনি।
তৌফিক অভিযোগ করেন, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কাছে বারবার লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ জানানো হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
ফলাফল ও ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত
রাত পর্যন্ত ভোট গণনা চললেও ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থী তৌফিক বলেন, তারা ফলাফল মেনে নাও নিতে পারেন। “আমরা শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার নিয়ে নির্বাচন করতে এসেছি। কিন্তু যেখানে অনিয়ম, পক্ষপাত আর বহিরাগত হস্তক্ষেপ—সেখানে ফলাফল গ্রহণ মানে অন্যায়ের বৈধতা দেওয়া।”
তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন অভিযোগগুলো বিবেচনা করে তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দিয়েছে, তবে আনুষ্ঠানিক কোনো তদন্ত ঘোষণা আসেনি।
সংবাদ সম্মেলনে ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়, জিএস প্রার্থী মো. শাফায়াত বক্তব্য রাখেন।
ভিপি প্রার্থী হৃদয় অভিযোগ করেন, অমোচনীয় কালি না থাকায় একাধিকবার ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। “যখন নির্বাচন কমিশনারকে বিষয়টি জানানো হয়, তিনি তখন দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বলেন যে কালি দিতে পারেননি। অথচ আগেই তিনি কিছু জানাননি—এটা তার ব্যর্থতা।”
তিনি আরও বলেন, সার্বক্ষণিক এলইডি স্ক্রিন চালু রাখার আশ্বাস দেওয়া হলেও দিনভর বিভিন্ন কেন্দ্রে বারবার তা বন্ধ ছিল। “যখন ভোট গণনা চলছে, তখনও স্ক্রিন অফ। বিভিন্ন কেন্দ্রে ছাত্রদলসহ অন্যান্য প্যানেলের প্রার্থীরা ঢুকতে পারেননি, কিন্তু ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রী সংস্থার প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়েছে।”
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বিবিএ ফ্যাকাল্টিতে প্রিসাইডিং ও রিটার্নিং অফিসারদের সঙ্গে প্রার্থী ও ভোটারদের বাকবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন নিরাপত্তা দিতে পারেনি। নতুন কলা ভবনে বহিরাগতরা লাঠি ও ইট নিয়ে হামলা করেছে। নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনকে কলঙ্কিত অধ্যায়ে পরিণত করেছেন। বারবার অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”
জিএস প্রার্থী শাফায়েত হোসেন অভিযোগ করেন, বিবিএ অনুষদে প্রায় ৪০০ ব্যালট সাক্ষরহীনভাবে বক্সে ঢোকানো হয়েছে। ২৩১ ও ২৩২ নম্বর রুমে ফরহাদ হলের জিএস পদপ্রার্থী নিজে উপস্থিত ছিলেন, এমনকি স্বতন্ত্র এক প্রার্থীকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন ও সমান সুযোগের পরিবেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকও পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন। এর বিচার সাধারণ শিক্ষার্থীরাই করবেন।”