শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে পোশাক তৈরির মূল্যবান কাঁচামাল, রপ্তানির জন্য প্রস্তুত পোশাক এবং গুরুত্বপূর্ণ নমুনা পণ্য (স্যাম্পল) ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইনামুল হক খান।
রোববার বেলা পৌনে ১টার দিকে ইনামুল হকের নেতৃত্বে বিজিএমইএর একটি প্রতিনিধিদল আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ইনামুল হক বলেন, “গতকাল (শনিবার) বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগার ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এ ঘটনায় আমরা বিজিএমইএ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই ঘটনা দেশের রপ্তানি বাণিজ্য, বিশেষ করে পোশাক শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের জন্য আজ আমরা এখানে এসেছি। সাধারণত হাই ভ্যালুড পণ্য ও জরুরি শিপমেন্টের ক্ষেত্রে আকাশপথ ব্যবহার করা হয়। অগ্নিকাণ্ডের ফলে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পণ্যসামগ্রী পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, “ধ্বংস হওয়া মালামালের মধ্যে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত পোশাক, পোশাক তৈরির মূল্যবান কাঁচামাল এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অনেক স্যাম্পল (নমুনা পণ্য) ছিল। এসব স্যাম্পল সরাসরি নতুন ব্যবসার পথ উন্মোচন করে এবং বিজনেস ডেভেলপমেন্টের জন্য অপরিহার্য। এসব নমুনা হারানো মানে হলো ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।”
ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে ইনামুল বলেন, “বিজিএমইএ সদস্যদের নির্ধারিত ফরম্যাটে ক্ষতি হওয়া পণ্যের তালিকা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। তথ্য দ্রুত সংগ্রহের জন্য একটি অনলাইন ডেটা কালেকশন পোর্টালও খোলা হয়েছে।”
শনিবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। প্রায় সাত ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত সোয়া ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ ছিল।
ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে ইনামুল হক বলেন, “আমাদের সদস্যরা প্রায় সবাই আকাশপথে পণ্য পাঠান। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০টি কারখানার পণ্য আকাশপথে রপ্তানি হয়। সেই হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। বিজিএমইএ দ্রুত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বিমানবন্দর, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্যদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করছে।”
তিনি ক্ষতি মোকাবিলায় কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন—
ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের জন্য সার্বিক সহযোগিতা ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা।
পোশাক শিল্পের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখার স্বার্থে দ্রুত নতুন শিপমেন্টের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
ইনামুল হক বলেন, “আমরা ভেতরে গিয়ে ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছি। একেবারে সম্পূর্ণ আমদানির সেকশনটা পুড়ে গেছে। কতদিনে এই অবস্থা কাটবে আমরা নিশ্চিত নই, তবে ১৫ দিন থেকে এক মাস সময় লাগতে পারে পুনরুদ্ধারে।”
বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, “এখানে বাণিজ্য উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছে, উনি এসেছিলেন। আমরা ঘটনাস্থলেই দাঁড়িয়ে মিটিং করেছি। পুরো জায়গার অ্যাসেসমেন্ট করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “বিজিএমইএর যেসব সদস্য এখন আমদানি করছেন, তাদের পণ্য যেন দ্রুত ক্লিয়ার করা যায়, সে বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ক্লিয়ার করার নির্দেশনা দিয়েছেন (আগে যেটা ছিল ৭২ ঘণ্টা)। আমরা আমাদের সদস্যদের সে অনুযায়ী জানাব।”