তারেক রহমানের আহ্বান: “গুপ্ত স্বৈরাচারের ফাঁদ এড়িয়ে ঐক্যবদ্ধ হোন, জিতুক ধানের শীষ”

‘চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষায় গুপ্ত স্বৈরাচার ওৎ পেতে আছে’— এমন মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় চূড়ান্ত একক প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

রবিবার রাতে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি জানান, শিগগিরই পর্যায়ক্রমে সব আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

তিনি বলেন,“দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তাকে বিজয়ী করার দায়িত্ব সবার। চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গুপ্ত স্বৈরাচার ওৎ পেতে আছে। তাই নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করবেন না, যেন প্রতিপক্ষ সেই সুযোগ নিতে না পারে।”

অনুষ্ঠান ও প্রেক্ষাপট

রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে প্রবাসে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্যপদ গ্রহণের অংশ হিসেবে দলের ওয়েবসাইটে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের উদ্বোধন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান

তারেক বলেন,“প্রতি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকতে পারে, এটি স্বাভাবিক। কিন্তু মনে রাখবেন, ধানের শীষ জিতলে আপনারাই জিতবেন, জিতবে দেশ ও গণতন্ত্র।”

তিনি আরও বলেন,“স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়ার মর্যাদা বা মাদার অব ডেমোক্রেসি খালেদা জিয়ার অবদানকে কেউ যেন প্রশ্নবিদ্ধ না করে— সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”

জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন,“‘ভোট দিলে ধানের শীষে, দেশ গড়ব মিলে মিশে’— এই স্লোগানটি এখন সময়ের দাবি।”

নির্বাচন ও প্রার্থী মনোনয়ন প্রসঙ্গে

তারেক রহমান জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত জানাবে এবং এরপর নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে।

তিনি বলেন,“গণতন্ত্রকামী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। প্রায় সব আসনে প্রার্থী মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত। কিন্তু প্রতিটি আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকলেও সবাইকে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়।”

রাজপথে থাকা শরিক দলগুলোকেও বিএনপির প্রার্থী করার সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন,“ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে যারা আমাদের সঙ্গে রাজপথে ছিলেন, তাদেরকেও বিএনপি সমর্থন দেবে। ফলে কিছু আসনে দলীয় প্রার্থী বঞ্চিত হতে পারেন।”

তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে স্মরণ করিয়ে দেন,“ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, আর দলের চেয়ে দেশ বড়।”

বিএনপির বিজয় ঠেকাতে চক্রান্ত

তারেক রহমান বলেন,“বিএনপির বিজয় ঠেকাতে একসময় পতিত ও পলাতক স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল, নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছিল। এখনো সেই অপপ্রচারের রেশ আছে। কিন্তু জাতীয়তাবাদী শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের থামাতে পারবে না।”

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,“অন্তর্বর্তী সরকারকালে নির্বাচন নিয়ে জনমনে যে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে, তা গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে সংকটে ফেলতে পারে।”

সমঝোতা ও রাজনৈতিক অবস্থান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন,“একটি দায়িত্বশীল দল হিসেবে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য রক্ষায় সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েছি। গণতান্ত্রিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ নিয়েছি, সরকারকেও সহযোগিতা করে যাচ্ছি। অথচ প্রতিনিয়ত নতুন শর্ত যোগ করে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটময় করে তোলা হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন,“কৌশল আর অপকৌশলের পার্থক্য বুঝতে না পারলে, গণতান্ত্রিক দলগুলো একসময় অপশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে— এই সতর্কতা সবাইকে মনে রাখতে হবে।”

প্রবাসী ভোট ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

প্রবাসে ভোটাধিকারের সুযোগ প্রসঙ্গে তারেক বলেন,“এবার প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যদিও প্রক্রিয়াটি কিছুটা জটিল মনে হতে পারে। তবু আমরা নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করা হবে।”

নারী নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তারেক রহমান

নারীদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে তিনি বলেন,“একজন মা, স্বামী ও পিতা হিসেবে বলছি— নারী নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক। আগস্ট মাসে ৯৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, সাতজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ সমাজ সভ্য হতে পারে না।”

তিনি সবাইকে আহ্বান জানান,“নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবাই যেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন ভূমিকা নেন। সরকার ও প্রশাসনেরও দায়িত্ব রয়েছে।”

সাইবার যুদ্ধের যুগে বিএনপির প্রস্তুতি

অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,“এখন যুদ্ধটা বক্তৃতা বা সভা নয়, সাইবার যুদ্ধ। যত বেশি ডিজিটালি মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়, ততই কার্যকর হবে রাজনৈতিক লড়াই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।”

তিনি বলেন, “এ যুগ প্রযুক্তির যুগ। আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি, কিন্তু দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার। বিশেষ করে আইটি প্রজেক্টে এগিয়ে যেতে সবাইকে নিজ উদ্যোগে কাজ করতে হবে।”