জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার’ অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা দাখিল করতে পারে বলে ‘আশা’ প্রকাশ করেছেন ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এরপর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের মাধ্যমে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হবে বলে শুক্রবার নিজের ফেইসবুকে দেওয়া পোস্টে উল্লেখ করেন তিনি। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম ও জুলাই অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের অংশগ্রহণে চলমান বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে এই পোস্ট দেন তিনি।
পোস্টে তাজুল ইসলাম লেখেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার তদন্ত রিপোর্ট আগামী সোমবার চিফ প্রসিকিউটর বরাবরে দাখিল করবে আশা করছি। তদন্ত রিপোর্ট দাখিল হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ অর্থাৎ ‘ফরমাল চার্জ’ দাখিলের মাধ্যমে হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে।”
ইতোমধ্যে চানখারপুল হত্যাকাণ্ডের দায়ে জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “ঐ হত্যাকাণ্ডের দায়ে আনুষ্ঠানিক বিচারের জন্য ফরমাল চার্জ চলতি সপ্তাহেই দাখিল করা হবে এবং এর মাধ্যমে জুলাই গণহত্যার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে ইনশাআল্লাহ।”
প্রধান কৌঁসুলি তার এই ফেইসবুক পোস্টে জুলাই-অগাস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিসহ বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ফেইসবুক পেইজকে ‘ম্যানশন’ দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে জুলাইয়ে শুরু হওয়া আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। আন্দোলনের মধ্যে ঢাকার চাঁনখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৮ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে গত ২০ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার পর এটিই প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন।
হাবিবুর রহমান ছাড়াও ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী, রমনা জোনের সাবেক এডিসি শাহ আলম মো. আকতারুল ইসলাম ও এসি মো. ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল সুজন, ইমাজ হোসেন ও নাসিরুল ইসলামকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন পলাতক।
প্রধান কৌঁসুলি তাজুল ইসলাম তখন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, তদন্ত শুরুর ১৯৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করল তদন্ত সংস্থা।
তদন্তে কী পাওয়া গেছে, সেই তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের নির্দেশে মাঠ পর্যায়ে থেকে ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে ৬ জনকে হত্যা করেন আসামিরা।” তিনি বলেন, “আমরা তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। আজ থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ দাখিলের প্রক্রিয়া শুরু হবে।”
চাঁনখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালেরও ‘সম্পৃক্ততা’ রয়েছে মন্তব্য করে তাজুল বলেন, “যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটির তদন্ত চলছে, সেজন্য তাদেরকে এই মামলায় আসামি করা হয়নি। তবে নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনার যে ভূমিকা রয়েছে তাদের, সেটার বর্ণনা এই চার্জশিটে রয়েছে।”
সোমবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সরাসরি তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সময় দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা আবদুল হামিদ বুধবার রাতে দেশ ছাড়েন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ডাকে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন বিক্ষোভকারী।
এ বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা আসার পর আইন উপদেষ্টা নিজের ফেইসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে বা আদালত থেকে রায় এলে আইনিভাবে দলটিকে নিষিদ্ধ করা যাবে।