অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি নরওয়ের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত

নরওয়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক রাষ্ট্র সচিব স্টাইন রেনেট হিহেইম মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলাদেশের প্রতি নরওয়ের অব্যাহত সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

বৈঠকে হিহেইম নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গহর স্টারের পক্ষ থেকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানান এবং দুই দেশের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আপনি নরওয়েতে একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই আপনার প্রসঙ্গে অত্যন্ত প্রশংসার সঙ্গে কথা বলেন।”

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসও দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “নরওয়ে সবসময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে, বিশেষ করে সংকটের সময়ে। আমাদের উন্নয়ন যাত্রায় নরওয়ের অবদান অনস্বীকার্য।”

হিহেইম গণতান্ত্রিক অগ্রগতি ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে নরওয়ের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “আমরা এখানে এসেছি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিককরণে আমাদের সমর্থন জানাতে। এই সময় আপনার কাঁধে বড় দায়িত্ব, এবং দেশের মানুষও বড় প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে আছে।”

অধ্যাপক ইউনূস বৈঠকে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলোর কথা তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, “জুলাইয়ের সহিংসতায় অনেক প্রাণ হারিয়েছে এবং অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিগত শাসনামলে আনুমানিক ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। ঋণগুলো যেন উপহারের মতো ব্যবহার করা হয়েছে এবং এখন আমরা বিশাল অঙ্কের অবৈতনিক বিলের মুখোমুখি।”

তবে চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তিনি বৈশ্বিক আস্থার প্রসার ঘটছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। “সাম্প্রতিক বিডা সামিটে বিশ্বের শীর্ষ কোম্পানিগুলো, নরওয়েসহ, আমাদের সম্ভাবনা যাচাই করতে এসেছে। তারা বাধ্যবাধকতা থেকে নয়, বরং আমাদের ওপর বিশ্বাস থেকে এসেছে,” বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি নরওয়েকে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। “তারা বাস্তব মানুষ, যাদের বাস্তব আশা আছে। শিশুরা এখন কিশোরে পরিণত হয়েছে, যারা ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায় বেড়ে উঠছে। আমরা তাদের ভুলে যেতে পারি না।”

হিহেইম এই মানবিক সংকটের গুরুত্ব স্বীকার করে বলেন, “বাংলাদেশ যেভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, আমরা তার জন্য গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। উন্নয়ন সহায়তার গণ্ডি ছাড়িয়ে আমাদের সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত ও গতিশীল অংশীদারিত্বে রূপ দিতে চাই।”

বৈঠকে সিনিয়র সচিব ও এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *