জাপানের সর্বাত্মক সহযোগিতায় একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার টোকিওর জেট্রো সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি বলেন, “আমি এখানে এসেছি আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে।”
জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন এবং জাইকার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার’-এ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা বড় বিপদের মধ্যে আছি। আক্ষরিক অর্থেই বাংলাদেশ ১৬ বছরের একটি ভূমিকম্প পার করেছে। সবকিছু ভেঙে পড়েছে। আমরা এখন টুকরো টুকরো করে গুছিয়ে তোলার চেষ্টা করছি।”
জাপানকে বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একজন ভালো বন্ধু কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়ায় এবং জাপান সেই বন্ধু। আমাদের কাজ হলো অসম্ভবকে সম্ভব করা এবং আপনারা আমাদের সঙ্গী ও বন্ধু। এটি বাস্তবে রূপ দিন।”
নতুন বাংলাদেশ গড়াকে একটি ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, “আমরা ইতিহাসকে দেখাতে চাই যে, এটি সম্ভব হয়েছে, তা-ও নিখুঁতভাবে। অন্য একটি বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করুন, যাকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বলি। তাই আমাদের কাজ হচ্ছে একসাথে সেই নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করা। আপনাদের সহযোগিতায় এটি বাস্তবায়নযোগ্য এবং আমরা ইতোমধ্যে তার ভিত্তি স্থাপন করেছি।”
সম্প্রতি মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে জাপানের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশ একটি চুক্তি করেছে। এই সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি সহায়তা করছে।
এই সহযোগিতার জন্য জাপানকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইউনূস বলেন, “এটি পিছিয়ে থাকা একটি দেশের অর্থনীতির ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। এটি কেবল অর্থ উপার্জনের বিষয় নয়, এটি মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার ব্যাপার।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশ হতে পারে সমুদ্র যোগাযোগের ক্ষেত্রে লাখ লাখ মানুষের ‘দরজা’। নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের মানুষের জন্য এটি সমুদ্র পথে যাতায়াতের পথ হতে পারে। “মাতারবাড়ি হচ্ছে বাকি বিশ্বের জন্য দরজা। আমরা তাদের জন্য এই দরজা খোলা রাখব।”
সেমিনারে জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প বিষয়ক পার্লামেন্টারি ভাইস মিনিস্টার তাকেউচি শিনজি বলেন, বাংলাদেশ একটি কৌশলগত বিন্দু যা এশিয়াকে সংযুক্ত করে এবং এই অঞ্চলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, জাপান বাংলাদেশকে একটি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখতে চায়।
তিনি জানান, জাপান সরকার দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে বাংলাদেশে, জাপানি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগে আগ্রহী এবং উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে।
ড. ইউনূস বলেন, জাপানি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা জোরদার করতে পারে। বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য মূলত টেক্সটাইল শিল্পভিত্তিক হলেও তিনি বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনার আহ্বান জানান।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং টোকিওতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী।