ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে ৯ শতাংশের কাছাকাছি বেড়ে গেছে, যা কয়েক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। হামলা পাল্টা হামলা চলতে থাকলে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কাও রয়েছে।
শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে অপরিশোধিত ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬ ডলার ১৯ সেন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫ ডলার ৫৫ সেন্টে, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৮ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।
এর আগে ইসরায়েলি হামলার তাৎক্ষণিক ‘ধাক্কায়’ দাম উঠে যায় ৭৮ ডলার ৫০ সেন্টে, যা ছিল গত ২৭ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট অপরিশোধিত তেলের দামও বেড়েছে। ব্যারেলপ্রতি ৬ ডলার ২২ সেন্ট (৯ দশমিক ১ শতাংশ) বেড়ে দাম ঠেকেছে ৭৪ ডলার ২৬ সেন্টে। এ তেলের দাম তাৎক্ষণিকভাবে ৭৭ ডলার ৬২ সেন্টে উঠে গিয়েছিল, যা ছিল ২১ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম এক দিনে এত বড় উত্থান দেখা গেল। ইসরায়েল বলেছে, শুক্রবার তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং তাদের সামরিক নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তারা বলছে, তেহরানকে পরমাণু অস্ত্র থেকে বিরত রাখতে তারা ‘দীর্ঘমেয়াদী অভিযানের’ অংশ হিসেবে এ হামলা চালিয়েছে। তেহরান বলেছে, তারা এ হামলার ‘কঠোর জবাব’ দেবে।
এ ধরনের হামলা এড়াতে ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
ইসরায়েলের হামলার পর তেহরানের একটি ভবনে আগুন নেভাতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস।
ইরানের ন্যাশনাল অয়েল রিফাইনিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি জানিয়েছে, তাদের শোধনাগার ও মজুদ রাখার স্থাপনার কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি; কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসইবির বিশ্লেষক ওলে ভ্যালবাই মনে করেন, প্রাথমিক উদ্বেগের বিষয় হলো, হরমুজ প্রণালী নিয়ে। মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনার প্রভাব এ জলপথে পড়ার ঝুঁকি আগে থেকেই ছিল, তবে এখন পর্যন্ত তা অক্ষতই আছে।
বিশ্বে যে পরিমাণ তেল ব্যবহার হয়, তার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এ পথে পরিবহন করা হয়। সে হিসাবে, হরমুজ প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন তেল আনা-নেওয়া হয় ১৮ থেকে ১৯ মিলিয়ন ব্যারেল।
সুইস প্রতিষ্ঠান ‘স্পার্টা কমোডিটিসের’ বিশ্লেষকরা বলছেন, সরবরাহে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটলে শোধনাগারগুলো ভারী তেলের পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত হালকা তেলের দিকে ঝুঁকবে।
জেপি মরগানের বিশ্লেষকরা বৃহস্পতিবার সতর্ক করে দিয়ে বলেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর পাল্টা ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি খুবই নাজুক হয়ে পড়বে। ব্যারেলপ্রতি দাম উঠতে পারে ১২০ থেকে ১৩০ ডলার পর্যন্ত, যা বর্তমান পূর্বাভাসের প্রায় দ্বিগুণ।
রিস্ট্যাড এনার্জির বিশ্লেষক জানিভ শাহ বলেন, “এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, এই তেলের দামের এই উত্থান কতদিন স্থায়ী হবে; রোববার পর্যন্ত, নাকি না আরও বেশি সময় থাকবে? আমাদের বিশ্লেষণ বলছে, সর্বাত্মক যুদ্ধ লাগার আশঙ্কা কম এবং দাম বৃদ্ধির প্রবণতা ছেদ ঘটবে।
“বর্তমানে ইরানের রপ্তানির প্রায় সবটাই চীনে যাচ্ছে। ফলে চীনই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে ওপেক প্লাসের অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতা বাজার স্থিতিশীল রাখতে পারে।”
ইরানে হামলার প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারেও। অনেক বিনিয়োগকারীরা সোনা ও সুইস মুদ্রার মতো নিরাপদ আশ্রয়ে ঝুঁকছেন।