যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য পাশে দাঁড়ালে হামলার হুমকি তেহরানের

ইরানের পাল্টা হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলকে সহায়তা করলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সামরিক ঘাঁটি ও জাহাজে আঘাত হানার হুমকি দিয়েছে তেহরান।

দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানানো হয়, তেহরান সতর্ক করে বলেছে—এই তিন দেশ যদি ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ঘাঁটি ও যুদ্ধজাহাজগুলো ইরানের নিশানা হবে।

ইরানের হুমকির জবাবে কঠোর বার্তা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ত।

তিনি বলেন, “ইরানের একনায়ক দেশের জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছে। ইসরায়েলের বেসামরিকদের ওপর যে অপরাধমূলক হামলা চালানো হচ্ছে, তার জন্য তেহরানবাসীকে চড়া মূল্য দিতে হবে। তেহরান জ্বলবে।”

ইসরায়েল শুক্রবার তার দীর্ঘদিনের আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ ইরানের ওপর স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রেরও সম্পৃক্ততা ছিল বলে অভিযোগ তেহরানের।

যুক্তরাজ্য এখন পর্যন্ত ইসরায়েলকে সরাসরি কোনো সামরিক সহায়তা দেয়নি বলে দেশটির সরকারি সূত্রে জানা গেছে। এমনকি ইসরায়েলও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সহায়তা চায়নি।

তবে অতীতে ইরানের ড্রোন হামলার সময় সাইপ্রাস থেকে ব্রিটিশ টাইফুন জেট পাঠিয়ে তা প্রতিহত করা হয়েছিল।

জাতিসংঘে ইরানের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ইসরায়েলের হামলায় জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাসহ ৭৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে ৩২০ জন, যাদের বেশির ভাগ বেসামরিক ব্যক্তি।

ইসরায়েলের দুই দফা হামলার জবাবে শুক্রবার রাতে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এতে ৪ ইসরায়েলির মৃত্যু হয়, আহত হন ৬৩ জন।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বলছে, তেহরানে নতুন করে হামলার জন্য প্রস্তুত তারা।

ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলায় পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

নিশানায় ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীরা
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, তাদের চালানো একাধিক হামলায় ইরানের নয়জন পরমাণু বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ নিহত হয়েছেন।

এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে হামলার প্রথম ধাপে ছয়জন নিহত হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। পরে আইডিএফ বলেছে, অভিযানের শুরুর দিকেই এই নয়জন মারা যান।

জানানো হয়, ইসরায়েলের হামলায় ইস্পাহান ও নাতাঞ্জের পরমাণু স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।

আইডিএফ বলছে, এ পর্যন্ত ইরানে ১৫০টির বেশি স্থানে আঘাত হেনেছে তারা। অন্যদিকে ইরানের পাঠানো বেশিরভাগ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ‘সফলভাবে ভূপাতিত’ করা হয়েছে।

আতঙ্কে তেহরান, বাজার ফাঁকা
যুদ্ধের আশঙ্কায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ইরানের রাজধানী তেহরানে।

সাংবাদিক রামিন মোস্তাকিম জানান, মানুষ চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুদ করতে দোকানে ভিড় করছে। বাজারের তাকগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে।

“মানুষ বুঝতে পারছে না কী হতে যাচ্ছে। তাই যেটুকু পারছে, মজুদ করে নিচ্ছে,” বলেন তিনি।

রাতভর বিস্ফোরণের শব্দে ঘুমহীন কাটছে মানুষের রাত। দিনে রাস্তাঘাট শুনশান, ক্যাফে ও দোকানগুলোতেও আগের মত ভিড় নেই।

ইরানের ‘অস্তিত্বের লড়াই’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, এই যুদ্ধ কতদিন চলবে তার নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। তিনি ইরানের পরমাণু সক্ষমতা ধ্বংসের পাশাপাশি দেশটির শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন।

ইরান এই লড়াইকে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ হিসেবে দেখছে। দেশটির সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েলের আক্রমণের জবাবে তারা সর্বশক্তি ব্যবহার করতে প্রস্তুত।

গত ২০ মাসের সংঘাতে কিছু অস্ত্রভাণ্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ইরানের হাতে এখনও প্রায় ২ হাজার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে বলে ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের ধারণা। এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে এখন কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে আঘাত হানছে তারা।

তবে ইরান চায় না যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এ যুদ্ধে জড়াক। কারণ তাদের সর্বোচ্চ নেতা জানেন, সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে সেই যুদ্ধে জয় পাওয়া কঠিন।

তবে পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে এখন যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতেও হামলার হুমকি দেওয়া শুরু করেছেন ইরানি কর্মকর্তারা।